রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করানোর চেষ্টার জেরে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। শুক্রবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে। এসময় কয়েকটি হাত বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় তিনটি মোটরসাইকেল।
এদিকে, সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের নগর বিশেষ শাখার (সিটিএসবি) একজন সদস্যসহ চারজন আহত হয়েছেন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।”
আহতরা হলেন- রাজশাহী নগরের দড়িখড়বোনা এলাকার মহিলা দলের নেত্রী লাভলী খাতুন, তার আড়াই বছর বয়সী শিশু লামিয়া, সিটিএসবি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন ও রেলওয়ের কর্মচারী মো. রনি।
পথচারী রনি ও সিটিএসবির সদস্য তোফাজ্জল ইটের আঘাতে আহত হন। মহিলা দলের নেত্রী লাভলীর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এতে কন্যাশিশুসহ আহত হন তিনি। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মেয়েকে নিয়ে বাসায় চলে যান মহানগর মহিলা দলের সহ-ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক লাভলী।
আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া তিনটি মোটরসাইকেলের মধ্যে একটি আজকের পত্রিকার রাজশাহীর মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার জাহিদ হাসান সাব্বিরের। তিনি ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মহিলা দল নেত্রী লাভলীসহ তার অনুসারীরা কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বহুতল ভবন ঘেরাও করেন। ওই ভবনের একটি ফ্ল্যাটে পরিবারসহ থাকেন নগরের বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ বাবু ওরফে ব্যাটারি বাবু। আওয়ামী সরকারের পতনের পর ব্যাটারি বাবু ও তার ভাই সাব্বির বাবুর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে মামলা হয়।
ওই ভবনের সামনে লাভলী দাবি করেন, তারা ভবনের ভেতরে আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ বাবুকে ঢুকতে দেখেছেন। তারা ভবনটি ঘিরে রাখলে যৌথবাহিনী অভিযানে আসে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে অভিযান চালিয়ে ওই ভবনে মোস্তাককে পাওয়া যায়নি। যদিও ভবনের নিরাপত্তা প্রহরীর খাতায় প্রবেশকারী হিসেবে মোস্তাকের নাম দেখা যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও মোস্তাককে তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে ভবনে ঢুকতে দেখা যায়।
মোস্তাক আহমেদকে না পেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভবনটি ঘিরে রাখে। পরে সেখান থেকে মোস্তাক আহমেদের ভাই সাব্বির বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্থানীয় সূত্র বলছে, মোস্তাক আহমেদ বাবুকে না পাওয়ার জন্য মহিলা দল নেত্রী লাভলী সাবেক যুবদল নেতা মারুফ হোসেন জীবনকে দায়ী করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মারুফের লোকজন শুক্রবার সন্ধ্যায় দড়িখড়বোনা এলাকায় লাভলীর বাড়িতে হামলা করেন। তারা বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে চলে গেলে লাভলীর অনুসারীরা দড়িখড়বোনা রেল লাইনের পাশে মারুফের ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করে। এরপর দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে দড়িখড়বোনা, উপশহর মোড়, রেলগেট, সপুরা ও শালবাগান এলাকায়। এসময় কয়েকটি হাতবোমারও বিস্ফোরণ ঘটে।
ঘটনার পর রাত সাড়ে ১১টায় নগরের মিয়াপাড়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন মহিলা দল নেত্রী লাভলী। সেখানে তিনি জানান, আওয়ামী লীগের অত্যাচারে আগে তারা বাড়িতে থাকতে পারেননি। এখন আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ বাবুকে তার ফ্ল্যাটে উঠতে দেখে ভবন ঘেরাও করা এবং তার ভাই সাব্বিরকে পুলিশে তুলে দেওয়ায় বিএনপির লোকজনই তার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।
তিনি জানান, সাব্বিরকে তুলে দেওয়ার পর মহানগর যুবদলের সাবেক সদস্য সচিব মারুফ হোসেন জীবন তাকে প্রস্তাব দেন যে, তাকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে, তিনি যেন এটা নিয়ে ঝামেলা না করেন। তিনি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার বাসায় একই প্রস্তাব আনা হয়েছিল। সেটি ফিরিয়ে দেওয়ার পর বাসায় হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন লাভলী।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মারুফ হোসেন জীবনের মোবাইল ফোনে কল করা হয়। মারুফের ছোটভাই পরিচয় দিয়ে সনি নামের এক ব্যক্তি ফোনটি ধরেন। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “লাভলীর ভাই তাঁতী লীগ আর ছেলে যুবলীগ করত। তাদের ধরার জন্য ছাত্রদলের ছেলেরা গিয়েছিল। তারপর মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ বাবুকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটেনি।”