পদ্মা সেতুর পাথরবিহীন রেলপথ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এরআগে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে শেষ স্লিপার বসানো হয়েছে। বুধবার ৭ মিটারের কংক্রিটের ঢালাই কাজ শেষের মাধ্যমে সম্পন্ন হলো রেলপথের কাজ, যুক্ত হলো আরেকটি বড় অর্জন।
আজ বুধবার (২৯ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রকল্পের সব কাজ শেষ হয়েছে কবলে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ নিশ্চিত করেছেন।
এখন অপেক্ষা শুধু ট্রায়ালের। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে আগামী মাসে চলবে ট্রেন।
চায়না থেকে মঙ্গলবার আকাশ পথে বাংলাদেশে আসে শেষ স্লিপারটি। রাতে শুরু হয় স্লিপারটির বসানোর কাজ। নিখুঁতভাবে মাপজোক শেষেই স্থাপন করা হয় সেতুর ওপর। তাপমাত্রা কমে আসলে শুরু হয় স্লিপারটির ওপর ঢালাই।
ঢাকা-মাওয়া রেললাইনের ট্র্যাক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ শওকত আলী বলেন, বিভিন্ন রকম ডাইমেনশনের মেজারমেন্ট করার দরকার ছিল। আমরা সেটি করছি। এ মেজারমেন্টগুলো জিপিএসের মাধ্যমে নেওয়া হয়
পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা সেকশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ বলেন, স্লিপারটি সফলভাবে সেতুর ওপর স্থাপন করা হয়েছে। বুধবার বাকি সাত মিটার ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। আশা করছি আগামী ৪ এপ্রিল পরীক্ষামূলক ভাবে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেল চালাতে পারবো।
পদ্মা মূল সেতু ও ভায়াডাক্টের সিনিয়র প্রকৌশলী জহুরুল হক বলেন, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার পাথর বিহীন রেললাইন আর বাকিটা ব্ল্যাস্টেট রেললাইন। এরমধ্যে পদ্মা সেতুর ওপরের বাকি থাকা সাত মিটার অংশের ঢালাই শেষ হয়। পাথর বিহীন এ রেলপথ তৈরিতে খরচ বেশি হলেও এটি হবে টেকসই। এ রেল পথে কোনো ঝাঁকুনি হবে না।
প্রকৌশলীরা জানান, মূল এবং দুপাশের ভায়াডাক্ট মিলিয়ে পদ্মা রেল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.৬৮ কিলোমিটার। রেলসেতুতে আটটি মুভমেন্ট জয়েন্ট আছে। দেশে প্রথমবারের মতো সর্ববৃহৎ রেলব্রিজ মুভমেন্ট জয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে পদ্মা রেল সেতুতে। দ্রুত গতিতে রেল চলার সময় এই মুভমেন্ট জয়েন্ট ৮০০ মিলিমিটার পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারবে। মূল সেতুতে ১১ হাজার ১৪০টি স্লিপার স্থাপিত হয়েছে। মুভমেন্ট জয়েন্টের ইস্পাতের আটটি স্লিপার ছাড়া বাকি সবগুলো কংক্রিটের তৈরি। এগুলো ফরিদপুরের ভাঙ্গা পুরোনো রেলস্টেশনের পাশে স্থাপিত কারখানায় তৈরি করেছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে বিশেষ তাপমাত্রায় মুভমেন্ট জয়েন্টের ইস্পাতের স্লিপারগুলো তৈরি করে আনা হয় চীন থেকে।
এদিকে রাজধানী থেকে যশোর পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যানবাহন চালু রেখেই নিচতলায় পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণ। এখন তা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্টের (সিএসসি) তত্ত্বাবধানে চলে পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ। পদ্মা সেতু ছাড়াও প্রকল্পের মোট ১৭২কিলোমিটার লেভেল ক্রসিংবিহীন রেলপথে ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস এবং ১৩টি রেলসেতুর কাজ শেষ হয়েছে।