সংস্কার নিয়ে বিএনপি যে প্রস্তাব দিয়েছে এগুলো সম্পন্ন করতে ৩-৪ মাসের বেশি লাগার কথা নয় বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি দলের পক্ষ থেকে সুচিন্তিতভাবে, এক্সপার্ট কমিটির সাথে বসেছি, অনেকের সাথে কথা বলেছি। আমরা যেসব সংস্কারের কথা বলেছি সেগুলো অধিকাংশ আইনি সংস্কারের বিষয়, কাগজের বিষয়, প্রাকটিক্যালি যে কাজগুলোর জন্য নির্বাচন কমিশন সময় নেয়, যেমন- ভোটার তালিকা প্রণয়ণ, নতুন ভোটার সংযোজন, কি কি ভুল-ভ্রান্তি আছে, ভুয়া ভোটার স্ক্রুটনি করা, তারপরে নির্বাচন কাজ, অফিসার নিয়োগ, ডিলিমিটেশন ইত্যাদি সব কাজ গুছাতে প্রাকটিক্যালি ৩-৪ মাসের বেশি সময় লাগার কথা না। গতকাল সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি যে প্রস্তাব দিয়েছে এগুলো অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দ্রুত নির্বাচন করা সম্ভব মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখানে এমন কোনো প্রস্তাব করা হয়নি যেটা নতুন করে কোনো কিছু করতে হবে। আমরা নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার কথা বলেছি, নির্বাচনের সচিবালয় করা এবং তাদের কিছু ক্ষমতা দেয়া ইত্যাদি, আমরা প্রচলিত আইনগুলোর সংশোধন, সংস্কার, এগুলোর কথা বলেছি। এগুলোর জন্য অধিক সময়ের প্রয়োজন হয় না। একটা নির্বাচনের বেসিক কাজ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, সেই ভোটার তালিকা প্রণয়নে বাড়ি বাড়ি যাওয়াৃ. আমরা এটা বুঝি নাই কি এক্সসারসাইজ হবে। ব্যাপারটা হচ্ছে যে, তালিকা ঘোষণার সময়ে এটাও ঘোষণা করা হয় যে, কারো নাম যুক্ত না হলে তাহলে তারা স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে নাম অন্তুর্ভুক্ত করবেন, কারো অভিযোগ থাকে যে, বেঁচে নাই, বিভিন্ন কারণে ভোটার হওয়া যায়্ না এরকম কারো নাম তালিকায় থাকলে তা কার্যালয়ে গিয়ে জানালেই তো ভোটার তালিকা হয়ে গেলোৃ এরপর নির্বাচনী প্রস্তুতিৃ সিডিউল ঘোষণা করা, রুল অনুযায়ী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করবে। এসব কিছু করতে এতো বেশি সময় লাগার কথা না। আমরা যেসব প্রস্তাব দিয়েছি সেগুলো মেনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে খুব বেশি বিলম্ব হওয়ার প্রয়োজন হয় না।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের আরো সংস্কার প্রশাসনিক সংস্কার, জুডিশিয়াল সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংস্কার আছে এগুলো সব সম্পন্ন করে নির্বাচন উপহার দিতে আমাদের মনে হয় না খুব বেশি হলে ৩/৪ মাসের বেশি সময় লাগবে। সব রিকমন্ডেশন ফাইনাল হওয়ার পরে আপনারা ধারণা পাবেন প্রাকটিক্যালি আমাদের কয়দিন সময় লাগবে একটা ইনক্লুসিভ ইলেকশন অনুষ্ঠানের জন্য।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেয়ার টেকার সরকার ইনপ্রেইস আছে বা হবে, এটাই ছিলো সবচাইতে বড় বাধা একটা ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন না হওয়ার। ডিলিমিটেশন, অপকর্মে জড়িতদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাদ রাখা এসব হচ্ছে উপসর্গ। আসল রোগ হচ্ছে, কেয়ার টেকার সরকার না থাকাটা। কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহাল হলে এই সমস্ত উপসর্গ আর থাকবে না। কেয়ারকেটাকার সরকার হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে বাধ্য।
যারা অপকর্মে যুক্ত ছিলো তাদের বাদ দেয়ার দাবি জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, যাদের নেতৃত্বে যেসব অপকর্ম হয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তারা বিতাড়িত হয়েছে পলায়ন করেছে। যাদের মাধ্যমে অপকর্ম করা হয়েছে তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি যাতে তারা আগামীতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় না থাকে সেই প্রস্তাব আমরা করেছি। কাজেই আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকছে তার নির্বাচনী কোনো স্ট্যাক নেই, নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। আর যারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে তাদের মধ্যে যারা এই ধরনের অপকর্মের সাথে আগে যুক্ত ছিলো বা থাকতে পারে তাদের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে এমন লোকদেরকে নিযুক্ত করা যারা এই ধরনের অপকর্মে যুক্ত হবেন না সেটা আমরা বলেছি।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পরিবর্তে আপগ্রেড পদ্ধতি করার আহ্বান জানিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, কে কোনদিন ১৮ বছর হবে সেটাও কিন্তু কম্পিউটার করে দিতে পারে। সেটার জন্য বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়ি বাড়ি যাওয়া এটা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ্য এবং অপ্রয়োজনীয় এবং এটাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যিনি মারা গেছেন তার নামটা অটোমেটিক্যালি বাদ চলে যাবে। এই বিষয়(ভোটার তালিকা) আমরা সংস্কার প্রস্তাবে স্পষ্ট করেছে এটা আপগ্রেড হবে।
তিনি বলেন, লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড তৈরি জন্য যাতে সত্যিকার ভাবে মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারে এবং জনগনের সত্যিকার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, ডামি প্রতিনিধি না, ভুয়া প্রতিনিধি না সেজন্য আমরা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। প্রশাসনের মাধ্যমে নির্বাচনকে কুক্ষিগত করতে বিগত সরকার অনেক কিছু করেছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি তারা যাতে রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করতে পারে, তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে সেজন্য আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রনীত বিধিমালার সংশোধন চেয়েছি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।