মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ঢাকঢোল তালে তালে মুখরিত হয়ে উঠেছে গারো পাড়াগুলোতে ।গারো সম্প্রদায়ের একসময় বড় উৎসব ওয়ানগালা জন্যে চলছে গান আর ঢাকঢোল তালে তালে নাচের প্রস্তুতি।গারো পাড়াগুলোতে বইছে উৎসবের আনন্দের বন্যা । চলছে নৃত্যের মহড়া।অন্যান্য বছরের মতো এবারও শ্রীমঙ্গল উপজেলার অধীনে ফুলছড়া গারোপাড়ায় আয়োজন করা হবে ওয়ানগালা উৎসবের।
জানা যায়, ‘ ওয়ানগালা ” হলো “নবান্ন উৎসব” গারোদের বিশ্বাস ‘মিসি সালজং’ বা শস্য দেবতার ওপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন। এই শস্য দেবতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির পাশাপাশি সব পরিবারের ভালোবাসা, আনন্দ এবং মঙ্গল কামনা করে ওয়ানগালা (নবান্ন) উৎসব পালন করবে গারো সম্প্রদায়।
পরিদর্শন কালে দেখা যায়, উপজেলার ফুলছড়া গারো পাড়াতে চলছে ওয়ানগালা উৎসবের মহড়া। প্রায় ১ মাস ধরে এখানে ওয়ানগালা উৎসবের মহড়া চলছে। গারো ছেলেমেয়েদের নৃত্যের বিভিন্ন কৌশল ও নিয়মকানুন শিখিয়ে দিচ্ছিলেন নৃত্যশিল্পীদের প্রশিক্ষক দিপ্তী রিছিল এবং বিদ্যাবিল গারোপড়া নৃত্যশিল্পী প্রশিক্ষক মৌসুমি আরেং মৌ সঙ্গে আছেন ঢাকঢোল বাদকরা।ওয়ানগালা উৎসবে এই নাচ-গান ও তালের সঙ্গেই দিনব্যাপী ধরে নাচতে হবে শিল্পীদের।বিভিন্ন গারো পাড়াগুলো এ ওয়ানগালায় অংশগ্রহণ করবে। তাই প্রতিটি গারোপড়ায় এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে ১০-১৫ জন করে দল বেধে ছেলেমেয়েরা শিক্ষকদের কথা অনুযায়ী মহড়া দিচ্ছে।
গারো মাতব্বর কমিটির সভাপতি অনুপ চিশিম ও ওয়ানগালা উৎসব আয়োজক কমিটির সভাপতি পার্থ হাজং জানান, এক সময় গারো পাহাড় এলাকায় জুম চাষ হতো এবং বছরে মাত্র একটি ফসল হতো। তখন ওই জুম বা ধান ঘরে উঠানোর সময় গারোদের শস্য দেবতা ‘মিসি সালজং’কে উৎসর্গ করে এ উৎসবের আয়োজন করা হতো। কারণ হিসেবে জানা গেছে, গারোদের ওই শস্য দেবতা এক সময় পাহাড়ি এলাকার গারোদের হাতে কিছু শস্য দিয়ে বলেছিল- তোমরা এটা রোপন কর, তাতে তোমাদের আহারের সংস্থান হবে এবং তোমরা যে শস্য পাবে তা থেকে সামান্য কিছু শস্য আমার নামে উৎসর্গ করবে। এরপর থেকেই গারোরা তাদের শস্য দেবতাকে এই ফসল উৎসর্গ করে আসছে।
কিন্তু গারোরা খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রথাটি এখন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে একত্রে করে পালন করা হয়। অর্থাৎ এক সময় তারা তাদের শস্য দেবতা মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করলেও এখন তারা নতুন ফসল কেটে যিশু খ্রিস্ট বা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করেন।
গারো মাতব্বর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামুয়েল জোসেফ হাজং বলেন, এবছর ১লা ডিসেম্বর ২০২৪ সাল ওয়ানগালা উৎসব পালন করা হবে,তবে একদিন আগে ওয়ানগালা কৃষ্টিগত আচার অনুষ্ঠান হবে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য খ্রিস্টভক্ত এবং গারাগানজিং, কতচু, রুগা, মমিন, বাবিল, দোয়াল, মাতচি, মিগাম, চিবক, আচদং, মাতাবেং ও আরেং নামে ১২টি গোত্রের গারো সম্প্রদায়ের লোকজন এবার ওয়ানগালা উৎসবে অংশগ্রহণ করবেন।
ওয়ানগালা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিষ দিও বলেন, ওয়ানগালা জন্য এই নৃত্যশিল্পীরা মহড়া করছে।দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা এই ওয়ানগালা উৎসব দেখতে এখানে ভিড় করবেন। এটা গারো জাতিগোষ্ঠীর ঐহিত্যবাহী উৎসব। ওয়ানগালা উপলক্ষে জেলার বিভিন গারোপল্লীগুলোতে প্রস্তুতি চলছে।প্রতি বছরের মতো ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবধারায় এ ওয়ানগালা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।এই মহোৎসব উপলক্ষ্যে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি।ওয়ানগালা গারো জনগোষ্ঠী উৎসব হলেও এখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী সমাবেশ হবে।