মাত্রাতিরিক্ত লোভ বিপদ ডেকে আনে

লোভ মানুষের স্বভাবজাত একটি অভ্যাস। লোভ নেই এমন মানুষ পৃথিবীতে খোঁজে পাওয়া মেলা ভার। প্রতিটি মানুষের ভেতর কম আর বেশি লোভ আছে।কিন্তু অতিরিক্ত লোভ মানুষের জন্য যেকোনো সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে।মাত্রাতিরিক্ত লোভের কারণেই আজ পৃথিবীতে নানারকম বিশৃঙ্খলা, মারামারি খুন খারাপি এমন কি চুরি ডাকাতির মত জঘন্য কাজের সূত্রপাত লোভের কারণে ঘটে। প্রকৃতপক্ষে পদের লোভ সম্পদের লোভ মানুষকে কখনোই শান্তিতে থাকতে দেয় না।এই চাওয়া পাওয়া গুলো মানুষকে নিরন্তর অশান্ত এবং অস্থির করে রাখে। যার দরুন মানুষ লোভের বশবর্তী হয়ে অন্যায় পথে পা বাড়ায়।ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, আদম সন্তানের মালিকানায় যদি সোনার একটি উপত্যকাও হয়, তবুও সে অনুরূপ আরো একটির মালিক হওয়ার অভিলাষী থাকবে। পরন্তুএকমাত্র মাটিই আদম সন্তানের চোখ (পেট) পূর্ণ করতে পারে। অবশ্য যে ব্যক্তি তওবা করবে, আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করবেন। (বুখারী ৬৪৩৭, মুসলিম ২৪৬২)। অপর আরেকটি হাদিসে প্রিয় নবি (সা.) বলেন — আদম সন্তানের যদি দুই উপত্যকা পরিমাণ স্বর্ণ থাকে, তাহলে সে কামনা করে- তার যদি আরেকটি উপত্যকা পরিমাণ স্বর্ণ থাকত! মাটি ছাড়া কোনো কিছুই তার মুখ পূর্ণ করতে পারবে না। ( জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩৩৭)। রিজিক আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা মানুষ টাকা পয়সা, ধন সম্পদের জন্য যত কিছুই করুক না কেনো পরিমাণের বেশি কেউ পাবে না।

রাসুল (সা.) বলেন : হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উপার্জনে সহজতা অবলম্বন করো। জেনে রেখো, যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ তার জন্যে নির্ধারিত রিজিক পূর্ণ না করে ততক্ষণ তার কিছুতেই মৃত্যু হবে না। একটু দেরিতে হলেও তা তার কাছে পৌঁছবেই। তাই আল্লাহকে ভয় করো। উপার্জনে সহজতা অবলম্বন করো। হালাল যতটুকু তা গ্রহণ করো আর যা কিছু হারাম তা বর্জন করো।( -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২১৪৪)। কেউ যদি হারাম কোনো বস্তুর প্রতি লোভ না করে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে এবং তাঁর ওপর পরিপূর্ণ ভরসা রাখে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য উত্তম জীবিকা অন্বেষণের পথ খুলে দেয় যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিযক দান করবেন, যা তার ধারণার বাইরে। যে-কেউ আল্লাহর উপর নির্ভর করে, আল্লাহই তার (কর্ম সম্পাদনের) জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার কাজ পূরণ করেই থাকেন। (অবশ্য) আল্লাহ সবকিছুর জন্য একটা পরিমাণ নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। (সুরা তালাক : আয়াত -৩)।

প্রিয় নবি মুহাম্মদ (সা.)এর অনুসরণ অনুকরণ ব্যতীত মানুষ কোনো কালেই লোভ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না, রাসুল নিরন্তর দুনিয়া বিমুখ ছিলেন,আর এটা উম্মতের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এবং শিক্ষা।রাসুলের এই শিক্ষা যদি কেউ বুকে ধারণ করে তাহলে প্রতিটি মানুষ দুনিয়ার প্রতি লোভ ছেড়ে আখেরাতের দিকে ধাবিত হবে।আর এতেই পূর্ণ সফলতা। লোভ যদি আখেরাতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে বুঝতে হবে অন্তরের মধ্যে এক ধরণের ব্যধি রয়েছে। এই ব্যধি সরানোর জন্য প্রয়োজন রাসুলের জীবনী পাঠ করা এবং জাহান্নামের ভয়াহবতার ব্যাপারে কুরআনে যেই আলোচনার কথা এসেছে তা স্মরণ করা।

লোভ কখনোই মানুষের পিছু ছাড়ে না যা অনবরত মানুষকে তাড়িয়ে বেড়ায়। কা’ব ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে কোন ছাগলেরপালে ছেড়ে দিলে তারা ছাগলের যতটা বিনাশ সাধন করে তার চাইতেও ধনলোভ ও খ্যাতিলোভ মানুষের দ্বীনের অধিক বিনাশ সাধন করে। (তিরমিযী ২৩৭৬, ইবনে হিব্বান ৩২১৮, সহীহুল জামে’ ৫৬২০)। কাজেই দুনিয়া অর্জন করতে গিয়ে যেনো আমাদের আখেরাত বিনাশ না হয়ে যায়।আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নিরন্তর তাঁর রহমতের ছায়ায় ঢেকে রাখুন। আমিন।