ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ইয়ভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানাকে ‘ফিলিস্তিনের ন্যায়সংগ্রাম এবং গাজাবাসীর জন্য একটি বড় বিজয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম গারিবাবাদি।
তিনি বলেন, ‘এই পরোয়ানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ঐতিহাসিক এবং সাহসী পদক্ষেপ। এটি নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জাতি, প্রতিরোধ শক্তি এবং তাদের সমর্থকদের জন্য একটি বড় সাফল্য। একই সঙ্গে জায়নিস্ট শাসন এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের জন্য একটি পরাজয়’। ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, অনেক দেশ আইসিসির স্বাধীন সত্ত্বা এবং এখতিয়ারকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে। এর ফলে, নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্ট এই দেশগুলোতে প্রবেশ করলেই গ্রেফতার হতে পারেন। বৃহস্পতিবার আইসিসি ঘোষণা করে যে, তাদের প্রাথমিক চেম্বার ইসরাইলের চ্যালেঞ্জ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আদালত নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছে।
গারিবাবাদি আরও জানান, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বহু আইনজীবী ও বিচারক আইসিসিতে ইসরাইলি অপরাধের প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। এসব অপরাধ এতটাই প্রকট ছিল যে, দ্য হেগ ভিত্তিক এই আদালত তাদের উপেক্ষা করতে পারেনি। আইসিসি জানায়, নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্ট ‘ইচ্ছাকৃতভাবে এবং জেনে-শুনে গাজার বেসামরিক জনগণকে খাদ্য, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী থেকে বঞ্চিত করেছেন’। যা যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।
ইরানের প্রতিক্রিয়া ইরানের কৌশলগত কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের প্রধান কামাল খাররাজি আইসিসির এই সিদ্ধান্তকে ‘পশ্চিমাদের জন্য একটি কেলেঙ্কারি’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আইসিসিপ ইউরোপীয় সদস্যদের অবশ্যই এই রায় বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ব্যাখ্যা করতে হবে, কেন তারা এতদিন এই ধরনের অপরাধীদের সমর্থন করেছে। তারা কী এই অপরাধী সরকারকে রাজনৈতিক, আর্থিক এবং সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে, নাকি অন্য পথে যাবে? কামাল খাররাজি এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন। যে বক্তব্যে আইসিসিকে ‘অবিশ্বাসযোগ্য’ বলা হয়েছে। খাররাজি বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলো, যারা নিজেদের মানবাধিকারের প্রবক্তা হিসেবে দাবি করে, তারা আসলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে বড় উদাহরণ’।
তিনি আরও বলেন, গাজা এবং লেবাননের যুদ্ধ অনেক সত্য প্রকাশ করেছে এবং তথাকথিত গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রবক্তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে। মূলত আইসিসির এই রায় ফিলিস্তিনিদের জন্য এক আশার আলো নিয়ে এসেছে। তবে এটি পশ্চিমা দেশগুলো এবং বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরোধিতার কারণে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। তবুও ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য এটি ন্যায়বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সূত্র: যুগান্তর