(গত দিনের পর) তাহাজ্জুদ : ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নামাজ হলো তাহাজ্জুদ। পবিত্র কোরআনে তাহাজ্জুদ আদায়ের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায়। আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ (সুরা : সিজদা, আয়াত : ১৬)। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৬৩)।
ইশরাক : সূর্য পরিপূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর ইশরাকের নামাজ আদায় করতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করতেন। এ সময় দোয়া, তাসবিহ পাঠ ও দ্বিনি আলোচনা করতেন। সূর্যোদয়ের পর তিনি দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। এই আমলের প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যদেরও উৎসাহিত করেছেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করল এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে বসে থাকল; অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করল, সে একটি পরিপূর্ণ হজ ও ওমরাহর সওয়াব পাবে।’ (সুনানে তিরমিজি : ৫৮৬)।
* দুহা : সূর্য মধ্য আকাশে স্থির হওয়ার আগ মুহূর্তে ‘দুহা’র নামাজ আদায় করা হয়। পৃথকভাবে আদায় করার অবকাশ থাকলেও অনেকেই এটাকে ইশরাকের নামাজ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, সময়ের শুরুতে আদায় করলে সেটা ইশরাক আর সময়ের শেষে আদায় করলে দুহা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার প্রিয়তম (রাসুল সা.) আমাকে তিনটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন, যেন আমি তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ত্যাগ না করি। প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, দুহার নামাজ ও ঘুমানোর আগে বিতর আদায় করা।’ (সহিহ বুখারি : ১১৭৮)।
আউয়াবিন : মাগরিব ও এশার নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে আদায়কৃত ছয় রাকাত নামাজ ‘আউয়াবিন’ নামে পরিচিত। আল্লামা মাওয়ার্দি এই মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (মুগনির মুহতাজ : ১/৩৪৩)। তবে কেউ কেউ ‘দুহা’ নামাজকেই আউয়াবিনের নামাজ বলেছেন। নাম নিয়ে মতভিন্নতা থাকলেও এই সময় নামাজ আদায়ের গুরুত্ব হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং এগুলোর মধ্যে কোনো মন্দ কথা না বলে, তার আমলনামায় বারো বছর ইবাদতের সওয়াব লেখা হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১১৬৭)। তাহিয়্যাতুল অজু : অজুর মাধ্যমে অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্র হওয়ার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দুই রাকাত নামাজ আদায় করা হয়। এই নামাজকে বলা হয় তাহিয়্যাতুল অজু। নিষিদ্ধ সময়ের বাইরে যেকোনো সময় এই নামাজ আদায়ের অবকাশ রয়েছে।
রাসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করল এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করল তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩৪)। তাহিয়্যাতুল মসজিদ : মসজিদে প্রবেশ করার পর আদায় করার নামাজ। আল্লাহ মসজিদে আসতে পারার কৃতজ্ঞতা ও মসজিদের সময়টুকু ফলপ্রসূ হওয়ার প্রার্থনা হিসেবে এই নামাজ পড়া হয়। নিষিদ্ধ সময় ছাড়া অন্য সময়ে মসজিদে প্রবেশের পর তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া যায়। তবে নামাজের জামাত ও ওয়াক্তের নির্ধারিত সুন্নত ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়বে না। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন দুই রাকাত নামাজ আদায় করার পর বসে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৬৭)
নফল ইবাদত সম্পর্কে ভুল ধারণা : নফল ইবাদতের ব্যাপারে আমাদের কয়েকটি ভুল ধারণা রয়েছে। যে কারণে আমরা আল্লাহর ভালোবাসা থেকে বিরত হচ্ছি। প্রথমত, অনেকে মনে করেন নফল মানে অতিরিক্ত ইবাদত। তা না করলেও সমস্যা নেই। কিন্তু নফল নামাজের লক্ষ্যের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, তা অতিরিক্ত কোন বিষয় নয়। বরং ফরজ ইবাদত পালনের ঘাটতি পূরণ করা হয় নফল দিয়ে।তাছাড়া নফল ইবাদতকে নামাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু নামাজ ছাড়া অন্যান্য বিধি-বিধানের ক্ষেত্রেও নফল আদায়ের সুযোগ রয়েছে।
পরিশেষে বলতে চাই, নফল অর্থ অতিরিক্ত। অর্থাৎ তা ফরজ এবং ওয়াজিবের অতিরিক্ত। একে ফরজ ও ওয়াজিবের পরিপূরক হিসেবেও গণ্য করা হয়। নফল ইবাদত বর্জন না করা উচিৎ। কেননা এটি আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের মাধ্যম। নফল ইবাদতের সওয়াব বেশি দরকার হবে কেয়ামতের দিন, হাশরের ময়দানে। যেদিন ফরজ ইবাদতের ক্রটির কারণে বান্দা আটকে যাবে, তখন তার নফল ইবাদতগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। দৈনিক অনেক নফল ইবাদত আছে, যা অতি সহজেই করা যায়। এর সওয়াবও বেশি। যেমন সাধ্যমতে নফল নামায পড়া, জিকির করা, তাসবীহ পড়া, দুরুদ শরীফ পড়া, কুরান তিলাওয়াত করা, কবর যেয়ারত করা, মাসনুন দুআগুলো প্রয়োজনের সময় পড়া, ভাল কাজের আগে বিসমিল্লাহ পড়া, দান সদকা করা, আল্লাহর সাহয্য চাওয়া, যে কোনো কাজে নিয়তকে পরিশুদ্ধ করা, সর্বদা অজু অবস্থায় থাকা, এমনকি একজন মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলাও নফল ইবাদতের সওয়াব। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নির্ধারিত ফরজ নামাজগুলো আদায়ের পাশাপাশি হাদিসে ঘোষিত নফল নামাজ পড়ার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের ফজিলত ও মর্যাদা লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।