পোশাক আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে পোশাকের মাধ্যমে সম্মানিত ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন। তাই একেবারে নিরুপায় না হলে এমন পোশাক পরা উত্তম, যাতে খোদাভীতি প্রকাশ পায়।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন- یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ قَدۡ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡكُمۡ لِبَاسًا یُّوَارِیۡ سَوۡاٰتِكُمۡ وَ رِیۡشًا ؕ وَ لِبَاسُ التَّقۡوٰی ۙ ذٰلِكَ خَیۡرٌ ؕ ذٰلِكَ مِنۡ اٰیٰتِ اللّٰهِ لَعَلَّهُمۡ یَذَّكَّرُوۡنَ ‘হে বনি আদম, আমি তো তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবে এবং যা সৌন্দর্যস্বরূপ। আর তাকওয়ার পোশাকই উত্তম। এগুলো আল্লাহর আয়াতসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা আরাফ: ২৬)এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদগণ বলেন, মুমিন নারী-পুরুষের পোশাক হবে সংযম আর বিনয়ের বহিপ্রকাশ, শালীন ও সুন্দর। যাতে পরকালমুখিতা প্রকাশ পাবে এবং নিরাপত্তার জন্যও সহায়ক হবে। পোশাক কোনোভাবেই অপব্যয়, অপচয়, অহংকার ও লজ্জাহীনতার পরিচায়ক হবে না।
শরিয়তের বিধান হলো পুরুষদের জন্য নিরেট লাল এবং হলুদ কালারের পোশাক পরিধান করা মাকরুহ। রাসুলুল্লাহ (স.) এমন কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন।
হাদিস শরিফে হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে- أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ لُبْسِ الْقَسِّيِّ وَالْمُعَصْفَرِ وَعَنْ تَخَتُّمِ الذَّهَبِ وَعَنْ قِرَاءَةِ الْقُرْآنِ فِي الرُّكُوعِ ‘রাসুলুল্লাহ (স.) রেশম, কুসুম রঙের কাপড় (হলুদ), স্বর্ণের আংটি এবং রুকুতে কোরআন পাঠ করতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসলিম, তিরমিজি: ২৬৪)
আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রা.) বর্ণনা করেছেন- رَأَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَىَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ إِنَّ هَذِهِ مِنْ ثِيَابِ الْكُفَّارِ فَلاَ تَلْبَسْهَا ‘রাসুলুল্লাহ (স.) আমার পরনে হলুদ রংয়ের (জাফরান রঙে) দুটি বস্ত্র দেখে বললেন, এগুলো কাফেরদের বস্ত্র। অতএব তুমি এসব পরবে না।’ (মুসলিম: ২০৭৭)
অন্য বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) বর্ণনা করেছেন- رَأَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَىَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ فَقَالَ ” أَأُمُّكَ أَمَرَتْكَ بِهَذَا قُلْتُ أَغْسِلُهُمَا قَالَ بَلْ أَحْرِقْهُمَا ‘নবীজি (স.) আমার গায়ে হলুদ রংয়ের দুটি বস্ত্র প্রত্যক্ষ করে বললেন, তোমার মা কি তোমাকে এ কাজে নির্দেশ দিয়েছেন? আমি বললাম, এ দুটি ধুয়ে ফেলি? তিনি বললেন, বরং দুটিকেই পুড়ে ফেল।’ (মুসলিম: ২০৭৭)
ইমরান ইবনু হুসাইন (রা.) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর নবী (স.) বলেছেন- لَا أَرْكَبُ الْأُرْجُوَانَ، وَلَا أَلْبَسُ الْمُعَصْفَرَ، وَلَا أَلْبَسُ الْقَمِيصَ الْمُكَفَّفَ بِالْحَرِيرِ ‘আমি লাল রঙের জিনপোষে সওয়ার হই না, হলুদ (কুসুম) বর্ণের কাপড় পরি না এবং রেশম আটকানো জামা পরিধান করি না।…’ (আবু দাউদ ৪০৪৮)
উল্লেখিত হাদিসগুলোর ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসিনে কেরামের বক্তব্য হলো- অমুসলিম সাধু সন্ন্যাসীদের ধর্মীয় পোশাক এবং বৈরাগী-সন্ন্যাসীদের গেরুয়া কিংবা কুসম্ব রঙের পোশাকের সাদৃশ্যশীল হওয়ায় সাহাবিকে তা পরতে নিষেধ করেছেন নবীজি। এমনকি তার নমুনাও যেন বাকী না থাকে সেজন্য তা জ্বালিয়ে ফেলতেও বলেছেন।
এ কথা পরিষ্কার যে, এই উম্মতের পুরুষদের জন্য রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ মিশ্রিত পোশাক পরা সরাসরি হারাম। এ বিষয়ে আহালুল ইমামগনের মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই। আর লাল এবং কুসম্ব (গেরুয়া হলুদ) রংয়ের পোশাক পরিধানের সমন্বয় হল অবিমিশ্র উজ্জ্বল লাল রংয়ের কাপড় পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ। এটা নিয়ে জমহুর ওলামাগণ একমত। তবে হলুদ কাপড় পরা সম্পর্কে ওলামাদের মধ্যে মতানৈক্য আছে। কেননা হাদিসে যে শব্দটি এসেছে (الْمُعَصْفَرَ) এর অর্থ বিভিন্ন হাদিসের কিতাবে অনেকে হলুদ করেছেন আবার অনেকে কুসম্ব বা রঙিন গেরুয়া রং করেছেন। এটাই মতপার্থক্য তবে বিশুদ্ধমতে (اصْفَرَ) শব্দের অর্থ হলুদ। কিন্তু হাদিসে এসেছে (الْمُعَصْفَرَ) মুয়াসফার শব্দের অর্থ কুসম্ব বা গেরুয়া জাফরান ইত্যাদি। যেটা মূলত বৌদ্ধ-ভিক্ষু, বৈরাগী-সন্ন্যাসীরাও গেরুয়া কিংবা কুসম্ব রঙের বিশেষ এক জোড়া পোশাক পরিধান করে থাকে। তাই যারা বলেছেন হলুদ পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ বা নাজায়েজ নয় এই মতটাই অধিকতর সঠিক। পাশাপাশি কাপড়ে লাল ও কুসম্ব বা গেরুয়া রং এর সাথে অন্য রং মিশ্রিত থাকলে উক্ত লাল এবং গেরুয়া পোষাক পরিধান করতেও কোনো বাধা নেই। ইনশাআল্লাহ। (নববি, আল-মাজমু‘ ৪/৩৩৭)
তবে মতানৈক্য এড়াতে মুত্তাকি তথা আল্লাহওয়ালাদের উচিত বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ থাকলেও তাকওয়ার পোশাক হিসাবে লাল ও কুসম্ব বা গেরুয়া রঙ এড়িয়ে চলা। কেননা মুত্তাকিদের একটি গুণ হলো তারা সন্দেহপ্রবণ বিষয়গুলো এড়িয়ে চলবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।