যেভাবে নিজেদের পুনর্গঠন ও জাতীয় ঐক্য বজায় রাখছে হিজবুল্লাহ

হিজবুল্লাহ বর্তমানে দুটি ফ্রন্টে লড়াই করছে। একদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। অন্যদিকে লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপ মোকাবিলা করছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিজবুল্লাহ গত ১১ নভেম্বর তাদের বার্ষিক ‘শহিদ দিবস’ উদযাপনের সময় ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে তীব্র হামলা চালায়। লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি সেদিন প্রায় ২৫০টি রকেট ও ড্রোন হামলা চালিয়ে ইসরাইল অধিকৃত হাইফা, আকর এবং সাফেদ শহরে আঘাত হানে। হিজবুল্লাহর এই আক্রমণ ইসরাইলের ১ অক্টোবর থেকে চলমান স্থল অভিযান ও দক্ষিণ লেবাননে হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে। এদিকে অব্যাহত যুদ্ধের চাপে হিজবুল্লাহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাক্কা খেয়েছে। হাসান নাসরুল্লাহসহ সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের হত্যার পাশাপাশি ইসরাইলের হাজারো বিমান হামলা ও সামরিক অভিযান সংগঠনটির ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।

তবে ইসরাইলি সেনারা দক্ষিণ লেবাননের কোনো গ্রাম সম্পূর্ণ দখলে নিতে ব্যর্থ হয়। নতুন নেতৃত্ব ও পুনর্গঠন সেপ্টেম্বরে হিজবুল্লাহর সাবেক মহাসচিব হাসান নাসরুল্লাহর নিহতের পর নতুন নেতা নাঈম কাসেমের অধীনে সংগঠনটি দ্রুত পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নাঈম কাসেমের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের মাধ্যমে সংগঠনটি তার কাঠামো পুনর্গঠন করেছে এবং শূন্যপদ পূরণ করেছে। সম্প্রতি হিজবুল্লাহ ফাতেহ-১১০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার শুরু করেছে। যার পরিসর ৩০০ কিলোমিটার এবং এটি ৫০০ কেজির বিস্ফোরক বহনে সক্ষম। অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ লড়াইয়ের পাশাপাশি হিজবুল্লাহকে ১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত জনগণের যত্ন নিতে হচ্ছে। যাদের মধ্যে অধিকাংশই দক্ষিণ লেবানন থেকে বিতাড়িত হয়েছে। এই বিশাল সংখ্যক মানুষকে খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করার প্রচেষ্টা ইসরাইলি হামলার কারণে ব্যাহত হয়েছে।

যদিও সাম্প্রতিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে। তবে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লেবাননের কিছু রাজনৈতিক দলের সমালোচনা বাড়ছে। বিশেষত খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে। অনেকে যুদ্ধের জন্য হিজবুল্লাহকেই দায়ী করছে। পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি এক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করছে। হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ওই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের চাপ বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করছে তারা। লেবাননের ভঙ্গুর ভারসাম্য লেবাননের প্রেসিডেন্টের পদটি ২০২২ সালের অক্টোবর থেকেই শূন্য রয়েছে।

হিজবুল্লাহ ও তাদের শিয়া মিত্রদের ছাড়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের যে কোনো প্রচেষ্টা বাস্তবে অকার্যকর হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফারেস বোইজ বলেছেন, লেবানন ঐতিহাসিকভাবে সমঝোতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। যদি একটি সম্প্রদায় তার স্বাভাবিক ভারসাম্যের বাইরে ক্ষমতা দাবি করে, তবে তা জাতীয় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। জাতীয় ঐক্যের অবস্থা বর্তমানে সাময়িকভাবে হলেও লেবাননে জাতীয় ঐক্যের একটি ধারা বজায় রয়েছে। বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যার প্রতি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ইতিবাচক মনোভাব জাতীয় সংহতির প্রতিফলন বহন করে। তবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এই ঐক্য টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। যদিও হিজবুল্লাহ তার প্রতিরোধ শক্তির প্রমাণ দিয়েছে। তবে যুদ্ধ চলতে থাকলে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ চাপ এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রভাব আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র: যুগান্তর