জামায়াত য‌দি ভুল ক‌রে, তা তু‌লে ধর‌তে হ‌বে

বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপনের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জা‌নি‌য়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যদি কোন ভুল করে থাকে, সেটি তুলে ধরতে হবে; আবার জনগণের স্বার্থে যেসব কাজ করে, তাও তুলে ধরতে হবে।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়া‌তের নবনির্বাচিত আমিরের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

ডা. শফিকুর রহমান ব‌লেন, গণমাধ্যম সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের ভূমিকা পালন করলে কেউ জালিম হতে পারবে না। সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে হবে। সাংবাদিকতা একটি মহান দায়িত্ব। এই দায়িত্ব জনগণের আমানত। জনগণের আমানত রক্ষায় সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা দলের হয়ে কাজ করা যাবে না।

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র চল‌ছে, জা‌নি‌য়ে জামায়াতের আমির ব‌লেন, এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। বিভক্ত জাতি কখনো রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর নয়। আগামীর বাংলাদেশ গঠনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর মতো আর কারো ওপর বিচারের নামে জুলুম না হোক। যে যার কর্মের ফল বিচারের মাধ্যমে পেলেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে। ফলে, ভুক্তভোগী মজলুম ন্যায়বিচার পাবে। আওয়ামী লীগ মানুষকে পশুর মতো হত্যা করেছে। শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ কেউ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের গণহত্যা থেকে রক্ষা পায়নি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ কেবল চার দলীয় জোটের ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি করে নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ পরিষ্কার করতে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছে।

‘যারা কথায় কথায় সংবিধানের দোহাই দেয়, তারা নিজেদের তৈরি করা সংবিধান নিজেরাই মানেনি। কোনো হত্যা মামলা বাদীর সম্মতি ব্যতীত প্রত্যাহার বা বাতিল করার ক্ষমতা কারো নেই। কিন্তু, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করেই ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলা বাতিল করে দিয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এখান থেকেই শুরু হয়েছে,’ বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করেই পিলখানা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে, অভিযোগ ক‌রে শ‌ফিকুর রহমান ব‌লেন, তাদের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতেই ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের ফ্যাসিবাদের মুখোশ উন্মোচন করেছে।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে শপথ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন  কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ।

শপথ অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, দিনের পথে যারা থাকে, তারা ভাই ভাই। এই সম্পর্ক পৃথিবীর সব সম্পর্কের ঊর্ধ্বে। আগামী দুই বছর দায়িত্বশীলদের পূর্বের সকল পরীক্ষার চেয়ে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানামুখী সংকট, সংঘর্ষ, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র এই দায়িত্বশীলদেরই মোকাবিলা করতে হবে।

মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, একজন ঈমানদারের জীবনে সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য ইসলামী আন্দোলনে শামিল হতে পারা। দ্বীন কায়েমের আন্দোলন আল্লাহর ফরজ বিধান। এই বিধান পালনের জন্য যারা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন, তারা আল্লাহর মনোনীত। কারণ, আল্লাহ ইসলামী আন্দোলনে তাকেই যুক্ত করেন, যাকে তিনি পছন্দ করেন। রুকন সদস্যরা আল্লাহর কাছে জান-মাল দিয়ে দ্বীন কায়েমে শামিল থাকার শপথ করেছেন। আল্লাহ শপথবদ্ধদের জন্য শপথের বিপরীতে জান্নাত প্রস্তুত রেখেছেন। যারা শপথ ভঙ্গ করবেন, তাদেরকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে, জামায়াতে ইসলামীর আমিরের কাছে নয়।

শপথ গ্রহণ শেষে নুরুল ইসলাম বুলবুল রুকন সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, একজন আমিরের পক্ষে এককভাবে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। এজন্য রুকন সদস্যদের শ্রম, ঘাম, মেধা ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে।

দায়িত্ব পালনে রুকন সদস্যদের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন নুরুল ইসলাম বুলবুল।