নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত মোকাররম সর্দারকে (৪৮) গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী।
এর আগে গত ২ অক্টোবর অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ফতুল্লার শাহ আলম নামে এক ব্যবসায়ী আদালতে হারুন অর রশীদ, মোকাররম সরদারসহ ১১ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘রোববার রাত আড়াইটায় ফতুল্লার আলীগঞ্জে যৌথবাহিনীর অভিযানে মোকাররমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে রাতেই তাকে ফতুল্লা থানায় হস্তান্তর করা হয়। মোকাররম সরদারকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
জানা গেছে, গ্রেপ্তার মোকাররম সর্দার কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানার দামপাড়ার মরহুম নুরুল ইসলামের ছেলে। তিনি একই জেলার নিকলী উপজেলা পরিষদের সদ্য অপসারণ হওয়া চেয়ারম্যান। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর উপজেলা পরিষদের জনপ্রিতিনিধিদের অপসারণ করা হলে আত্মগোপন করেন মোকাররম। সম্প্রতি ফতুল্লা থানায় মামলা হওয়ার পর থেকে মোকাররম বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। তাকে গ্রেপ্তারে থানা পুলিশ ও যৌথবাহিনী নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মোকাররম সর্দারের বাবা নূরুল ইসলাম জীবিকার তাগিদে ৯০ দশকে নারায়ণগঞ্জ আসেন। সেখানে তিনি বড় ছেলে মোকাররমকে সঙ্গে নিয়ে দিনমজুরের কাজ করতেন। এক সময় স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা কাউছার আহম্মেদ পলাশের হাত ধরে লোড-আনলোড শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন মোকাররম। পরবর্তীতে শ্রমিকদের সর্দার হন তিনি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় কয়েকটি কোম্পানি জাহাজের মালামাল রেখে চলে গেলে ফতুল্লার প্রভাবশালী শ্রমিক লীগ নেতা কাউছার আহম্মেদ পলাশের সহযোগিতায় চাঁদাবাজিসহ জাহাজের মালামাল লুট করে প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক হন মোকাররম।
স্থানীয়রা আরও জানান, হারুন অর রশীদ নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার পদে থাকাকালে প্রায় সময় মোকাররম সর্দারের অফিসে সময় দিতেন। দীর্ঘ সময় মোকাররম ও হারুনকে টাকা-পয়সার হিসাব-নিকেশ করতে দেখেছেন অনেকেই। আলীগঞ্জ এলাকায় অন্তত ৮ থেকে ১০টি প্লট কিনেছেন মোকাররম সরদার। এর মধ্যে চারটি বহুতল বাড়ি করেছেন। অনেকেই এসব বাড়িকে এসপির বাড়ি বলে জানেন।
সূত্রগুলো জানায়, হারুনের মদদে মোকাররম ফতুল্লায় পাথর ও কয়লা ব্যবসার পাশাপাশি জাহাজের পণ্য চোরাইয়ের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ নেন। এসব অবৈধ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হন হারুন ও মোকাররম। অবৈধ সিন্ডিকেটের কাছ থেকে হারুনের হয়ে বিপুল অঙ্কের চাঁদা আদায় করতেন মোকাররম সর্দার। এসব অর্থের একটা বড় অংশ রাখা হতো তার কাছে। হারুনের এসব টাকা বিভিন্ন ব্যবসায় খাটাতেন মোকাররম।
কিশোরগঞ্জ সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় মোকাররম সর্দারের মাধ্যমে নামে-বেনামে অন্তত সাতটি ইটভাটা করেছে হারুন। এর বাইরে জেলার বিভিন্ন ইটভাটায় কয়লা সরবরাহের অন্তত শত কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, গত ২১ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোকাররম নিকলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ডিবির হারুন অর রশীদ কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশকে ব্যবহার করে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে মোকাররমকে বিজয়ী করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।