ছবি আতঙ্কে বিদেশে পলাতক আ. লীগ নেতারা

জীবনরক্ষায় দেশত্যাগ করা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতারা এখন ভিন্ন এক আতঙ্কে ভুগছেন। পালিয়ে বিদেশ গিয়ে জীবনরক্ষা করলেও ছবি আতঙ্কে ভুগছেন সেখানে থাকা নেতারা

প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতাসহ বিভিন্ন রাজ্য ও ইউরোপ-আমেরিকা মিলিয়ে অন্তত ৫০ জন কেন্দ্রীয় নেতা গত ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশ ছেড়েছেন। সারাদেশে বিভিন্ন পর্যায়ের পদ-পদবীধারী আরও অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতাও চলে গেছেন দেশের বাইরে।

গত এক সপ্তাহে দেশত্যাগ করা আওয়ামী লীগের অন্তত এক ডজন নেতার সঙ্গে দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদকের কথা হয়। কথা হওয়া প্রায় সব নেতাই দেশ রূপান্তরকে বলেন, চলাচলে তাদের সতর্কতার কথা। কারও ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি হতে চান না বলেই সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করছেন নেতারা।

জানা গেছে, এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা ছবি আতঙ্কে বিদেশের বাড়িতে থেকে ঘরবন্দী জীবনযাপন করছেন। ইতিমধ্যে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার শপিংমল ও পার্কে ঘোরাফেরা করার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ ও ভাইরাল হয়েছে। সেসব ছবি নিয়ে মুখরোচক গল্প, খবর এসবও প্রকাশ হয়েছে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ভাইরাল হওয়া সেসব ছবিতে পলাতক নেতারা বিব্রতবোধ করেছেন। এগুলো এড়িয়ে চলতে চান তারা।

পলাতক নেতারা আরও বলেন, সামনে আর কেউ যাতে এমন কারও মোবাইল বা ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি না হন তাই বিদেশেও এখন সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করছেন। পরিচিত, জনবহুল এলাকা ও পরিচিতজন এসব এড়িয়ে চলাচল করছেন আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা।

যোগাযোগ ঘটেছে এসব নেতারা আরও জানান, ঘরবন্দী অবস্থায় দিনযাপন করছেন তারা। একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া হোটেল কক্ষ, ভাড়া নেওয়া বাসাবাড়ি থেকে এখন আর বের হন না নেতারা। বের হলে কখন কার ফ্রেমেবন্দি হন এবং সেটিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়, সেই আতঙ্ক আছে তাদের ভেতরে। এগুলো নিয়ে দেশে নানারকম মুখরোচক গল্প সাজানো হয় সেই ভয়ও আছে তাদের ভেতরে। পলাতক নেতারা এখন মুখরোচক গল্পের শিকার হতে চান না।

দেশত্যাগ করা এসব নেতারা আরও বলেন, আগে কফি শপে, বিপণি-বিতান ও বড় শপিংমলে দেখা এবং আড্ডা হত তাদের। এখন আর অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় আড্ডা দেওয়া এবং কফি শপে গিয়ে কফি খাওয়াও হচ্ছে না তাদের। কাছাকাছি থাকলেও একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ কম হচ্ছে। তবে মোবাইলে আলাপ হয়।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেশিরভাগ সময় কাটে অনলাইনে যুক্ত থেকে। সেখানে দেশের প্রায় সবগুলো পত্রিকা ও অনলাইন পড়া হয়। পড়া হয় কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা। এছাড়া, মোবাইলে বিভিন্ন রকম টিকটক দেখেও সময় কাটে অনেক নেতার। তিনি বলেন, এখানে বাংলাদেশি কয়েকটি চ্যানেলের টকশো দেখেন তারা। তাছাড়া, ইংরেজি, হিন্দি ও তামিল ছবি দেখে সময় কাটান অনেক নেতা। আগের মত করে সশরীরে দেখা করা হচ্ছে না।

আমেরিকায় চলে যাওয়া সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, অনলাইনে সময় কাটে বেশিরভাগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, এমনকি টিকটকও দেখেন। বিশ্বস্ত বন্ধু ও আত্মীয়ের বাসায় যাওয়া-আসা করেন তিনি। ছবি আতঙ্কে বাইরে আড্ডা কমই হচ্ছে বলে জানান এ নেতা।

যুক্তরাজ্যে চলে যাওয়া আরেক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, মাঝেমাঝে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গেও কথা বলে সময় কাটে তার। অবশ্য অনেকের মোবাইল নম্বর না থাকায় সেসব কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জানতে কারও না কারও সঙ্গে দিনে অন্তত একবার কথা হয়। নিজেকে এখনো গুছিয়ে তোলা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।