একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক রিয়াজ আহমেদের জন্মদিন ছিল শনিবার (২৬অক্টোবর)। এদিন তিনি ৫২ বছর পেরিয়ে ৫৩ বছরে পা দেন। এ তথ্য হয়তো সবারই জানা। কিন্তু জানেন কি, একসময় বিমান চালক ছিলেন রিয়াজ? সেখানে থেকে কীভাবে এলেন চলচ্চিত্রে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
রিয়াজের পুরো নাম রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সিদ্দিকী। ১৯৯৫ সালে চাচাতো বোন কিংবদন্তি চিত্রনায়িকা ববিতার হাত ধরে তার চলচ্চিত্র জগতের পথ চেনা। কিন্তু অভিনয়ে আসার কোনো ইচ্ছাই ছিল না হালের জনপ্রিয় এ নায়কের। ছোটবেলায় তার ইচ্ছা ছিল স্থপতি হবেন। কিন্তু পরে হয়ে যান বৈমানিক।
পরিবারের সদস্যদের উৎসাহে যশোরে বিমানবাহিনীতে ভর্তি পরীক্ষা দেন রিয়াজ। দীর্ঘ প্রশিক্ষণ শেষে যোগদান করেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে বিমানচালক হিসেবে। কিন্তু শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ১৯৯৩ সালে চাকরিচ্যুত হন তিনি। এরপর বাড়ি ছেড়ে ঢাকা শহরে পাড়ি জমান রিয়াজ। চাচাতো বোন ববিতার সহায়তায় শুরু করেন চলচ্চিত্রে অভিনয়।
শোনা যায়, রিয়াজ ঢাকায় আসার পর তাকে নিয়ে একদিন এফডিসিতে শুটিংয়ে যান বড় বোন ববিতা। ওই ছবিতে ববিতার বিপরীতে নায়ক ছিলেন প্রয়াত অ্যাকশন হিরো জসিম। তার নজরে পড়েন রিয়াজ। চকোলেট বয় রিয়াজকে দেখে মনে ধরে জসিমের। অভিনয়ের প্রস্তাব দেন তাকে।
এরপর ১৯৯৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বাংলার নায়ক’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় অভিষেক হয় রিয়াজের। সে সিনেমার মূল ভূমিকায় ছিলেন জসিম ও শাবানা। সেখানে রিয়াজ অভিনয় করেন শাবানার ছোট ভাইয়ের চরিত্রে।
রিয়াজ পরবর্তীতে পরিচিতি পান ব্যবসাসফল ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর ‘দুই দুয়ারী’ ‘শ্যামল ছায়া’ ‘হাজার বছর ধরে’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘শিরি-ফরহাদ’সহ অনেক ব্যবসাসফল সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বহু নাটকেও অভিনয় করেছেন রিয়াজ। বিশেষ করে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের অনেক নাটকেই দেখা গেছে তাকে। এছাড়া প্রযোজক হিসেবেও খ্যাতি আছে রিয়াজের। ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তার ব্লকবাস্টার ‘হৃদয়ের কথা’ সিনেমাটি প্রযোজনা করেন তিনি। দুই জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর ও পূর্ণিমার সঙ্গে রিয়াজের জুটি দর্শকদের সবচেয়ে বেশি পছন্দের।
সালমান শাহ মারা যাওয়ার পর রিয়াজ-শাবনূর ও রিয়াজ-পূর্ণিমা জুটিই চলচ্চিত্র মহলে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে। এছাড়া রিয়াজ কাজ করেছেন নায়িকা পপি, শাওন এবং এ প্রজন্মের মম, তিশা, মাহিদের সঙ্গেও। অভিনয় দক্ষতা দিয়ে তিনবার ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ এবং সাতবার ‘মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার’ ঘরে তুলেছেন রিয়াজ।
ব্যক্তিজীবনে ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর মডেল মুশফিকা তিনাকে বিয়ে করেন রিয়াজ। তিনা ছিলেন ২০০৪ সালের বিনোদন বিচিত্রার ফটোসুন্দরী বিজয়ী। বিয়ের প্রায় আট বছর পর ২০১৫ সালের ১ জুন কন্যাসন্তানের বাবা হন রিয়াজ-তিনা দম্পতি। এরপর ২০২২ সালে হন পুত্রসন্তানের বাবা। তার নাম রেখেছেন আরিজ সিদ্দিকী।
জনপ্রিয় এই নায়কের আরও দুটি পরিচয় আছে। বহুদিন ধরে তিনি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত দীর্ঘদিন। দলটির নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা এবং গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে রিয়াজকে প্রায়ই দেখা যায়। বিদেশে শেখ হাসিনার সফরসঙ্গীও হয়েছেন একবার।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণেই গত জুলাই-আগস্টে সংগঠিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বিতর্কিত হন রিয়াজ। ‘আলো আসবেই’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের যুক্ত ছিলেন তিনি, যেখান থেকে আন্দোলন দমাতে নানা দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ফলে গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন নায়ক ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিক রিয়াজ। তিনি কোথায় আছেন কেমন আছেন জানা যাচ্ছে না কিছু। ৫৩তম জন্মদিন কীভাবে কোথায় কাটিয়েছেন, সে সম্পর্কেও কিছু জানা যায়নি।