আল্লাহ তাআলা যখন নেয়ামত দান করেন, তখন তিনি চান বান্দা তার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করুক। মুখে তার প্রশংসা করুক, তার দয়া স্বীকার করুক, কাজেও তার বিধান ও নির্দেশনার আনুগত্য করুক। আল্লাহ তাআলার দেওয়া সম্পদ লাভ করলে তার নির্দেশ অনুযায়ী জাকাত দেওয়া, সদকা দেওয়া আল্লাহর তাআলার শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা। সুস্থ থাকলে নামাজ পড়া ও রোজা রাখাও আল্লাহর তাআলার শুকরিয়া আদায়ের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তাআলার নেয়ামত পেয়ে তা নিজের কৃতিত্ব বলে জাহির করা, দম্ভ ও অহংকার করা, ওই নেয়ামতের হক আদায় না করা আল্লাহ তাআলার না-শোকরি বা অকৃতজ্ঞতা গণ্য হয়।
বান্দা শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহ তাআলা নেয়ামত বৃদ্ধি করে দেন, আর বান্দা যদি অকৃতজ্ঞ হয়, তাহলে আল্লাহ শাস্তি হিসেবে নেয়ামত উঠিয়ে নেন। কোরআনে শোকর আদায় করলে নেয়ামত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ও অকৃতজ্ঞতার জন্য কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ বলেন, তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা আদায় কর তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা অস্বীকার করো, তাহলে আমার আজাব অবশ্যই কঠিন। (সুরা ইবরাহিম: ৭)
শোকর আদায়ের শাব্দিক অর্থ কৃতজ্ঞতা আদায় করা। কিন্তু আল্লাহর শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা আদায়ের মধ্যে তার নেয়ামত স্বীকার করার পাশাপাশি তার প্রতি বিশ্বাস ও তার আদেশ-নিষেধের আনুগত্যও অন্তর্ভুক্ত হয়ে ব্যাপক অর্থ প্রকাশ করে। কোরআনে অনেক জায়গায়ই শোকরের কথা বলা হয়েছে ব্যাপক অর্থে। যেমন সুরা দাহরে আল্লাহ তার বান্দাদের দুই ভাগে ভাগ করেছেন। এক অংশকে বলেছেন ‘শাকের’ বা কৃতজ্ঞ, আরেক অংশকে বলেছেন ‘কাফুর’ বা অকৃতজ্ঞ। আল্লাহ বলেন, আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি; হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় অকৃতজ্ঞ হবে। (সুরা দাহর: ৩)
অর্থাৎ একদল মুমিন বা আল্লাহর অনুগত বান্দা, আরেকজন কাফের বা আল্লাহর নাফরমান বান্দা। যারা মুমিন তারা কতৃজ্ঞ, যারা কাফের, তারা অকৃতজ্ঞ।
সুরা বাকারায় শোকর আদায়ের নির্দেশ দিয়ে ও অকৃতজ্ঞ হতে নিষেধ করে আল্লাহ বলেন, তোমরা আমার শোকর আদায় করো, অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সুরা বাকারা: ১৫২)
অর্থাৎ আল্লাহর অনুগত বান্দা হও, নাফরমান বান্দা হয়ো না।
এ সব আয়াতে শোকর বলে শুধু মুখে নেয়ামত স্বীকার করা বোঝানো হয়নি, অন্তরে, মুখে ও কাজের মাধ্যমেও শোকর আদায় বোঝানো হয়েছে। প্রকৃত শোকর হলো মুখে নেয়ামতদাতার প্রশংসা করা ও নেয়ামতের কথা স্বীকার করা, অন্তরেও নেয়ামতের কথা স্বীকার করে নেয়ামতদাতার প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা এবং কাজে নেয়ামতদাতার আনুগত্য করা, তার নির্দেশ মেনে চলা। আল্লাহ বলেন, হে দাউদ পরিবার, তোমরা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমল করে যাও, আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ। (সুরা সাবা: ১৩)
হাদিসে নবিজিও (সা.) বুুঝিয়ে দিয়েছেন, আল্লাহর শোকর আদায় করতে হবে তার আনুগত্য ও ইবাদতের মাধ্যমে। আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এত বেশি নামাজ আদায় করতেন যে তার দুই পা ফুলে যেতো। একদিন আমি বললাম, আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তবু আপনি কেন এত কষ্ট করছেন? নবিজি (সা.) বললেন, এত নেয়ামতের পরও আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে আগ্রহী হবো না? (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
আল্লাহ তার কৃতজ্ঞ বান্দাদের কৃতজ্ঞতার প্রতিদান দেন। তাদের নেয়ামত বৃদ্ধি করে করে। তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন। আল্লা তাআলা বলেন, তোমরা শোকর আদায় করলে তিনি তোমাদের জন্য তা পছন্দ করেন। (সুরা জুমার: ৬) অপর এক আয়াতে ঘোষণা করেন, আমি কৃতজ্ঞদের অবশ্যই পুরষ্কৃত করব। (সুরা আলে ইমরান: ১৪৫) আরেক আয়াতে কৃতজ্ঞতার প্রতিদানে নেয়ামত বৃদ্ধি ও অকৃতজ্ঞতার জন্য শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন। (সুরা ইবরাহিম: ৭)নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে বান্দাকে আল্লাহ তাআলা কৃতজ্ঞতার গুণ দান করেন, তাকে সমৃদ্ধি দান করা থেকে বঞ্চিত করেন না। কারণ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা শোকর আদায় করলে অবশ্যই আমি বাড়িয়ে দেব।’ (শুআবুল ঈমান)