এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা ফল বাতিল করে পুনরায় ফল তৈরি ও প্রকাশের দাবিতে আন্দোলন করেন। পরে তারা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডর চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের অবরোধ করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বেলা দেড়টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সাড়ে সাত ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ রয়েছেন তারা। জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডর চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী পতদ্যাগের ঘোষণা দিয়েছি। তাদের দাবি মেনে নিয়েছি। এরপরও তারা শিক্ষা বোর্ড প্রাঙ্গণ থেকে সরছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেলা দেড়টার সময় চেয়ারম্যানের অফিস ভাঙচুরের পর থেকেই চেয়ারম্যান স্যারসহ আমরা অবরুদ্ধ রয়েছি। শিক্ষার্থীদের সর্বশেষ দুটি দাবি—ফলাফলের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো এবং চেয়ারম্যানের পদত্যাগ। চেয়ারম্যান দুটি দাবিই মেনে নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবি জানিয়েছে বলছে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। তবে পুলিশ ও সেনাবাহিনী চেয়ারম্যান স্যারকে অপেক্ষা করতে বলেছেন। এই পরিস্থিতির মধ্যেই রয়েছি আমরা।’ এর আগে রবিবার বেলা ১টার দিকে বিক্ষোভের এক পর্যায়ে বেলা দেড়টার দিকে চেয়ারম্যানের অফিসে গিয়ে ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে বহিরাগত ও অভিভাবকও রয়েছেন বলে জানা গেছে। তখন অবরুদ্ধ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডর চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘আমার রুম ভাঙচুর করা হয়েছে।’ কেন ভাঙচুর ও অবরুদ্ধ করা হলো, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের অটো পাস দিতে হবে, সেই দাবি নিয়ে এসে ভাঙচুর করেছে।’ তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে অবস্থান নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টাও করেছেন। রবিবার বেলা ১১টার দিকে অটো পাসের দাবিতে অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। পরে বেলা দেড়টার দিকে প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। চেয়ারম্যানের অফিস ভাঙচুর ও কাগজপত্র তছনছ করেন শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা। জানা গেছে, দুপুরে শিক্ষা বোর্ডের প্রবেশের সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এতে তিন ছাত্রীসহ ছয়জন আহত হন। তাদের মধ্যে দুজন ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তারা হলেন প্রিয়াঙ্কা (১৮) ও জান্নাতুল (১৮)। গত ১৫ অক্টোবর এইচএসসি-সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ইতোমধ্যে যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক। এ জন্য তারা সব বিষয়ের ওপর ‘ম্যাপিং’ করে ফলাফল নতুন করে প্রকাশের দাবি জানাচ্ছেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রকাশিত ফলাফল বৈষম্যমূলক। সব কটি বিষয়ের ওপর সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ করতে শিক্ষা বোর্ডকে বলেছি। আমরা এসএসসি পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতেই সব বিষয়ের ওপর সাবজেক্ট ম্যাপিং করার দাবি জানাই। প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার কারণে গত ১৮, ২১, ২৩ ও ২৫, ২৮ জুলাই এবং ১ ও ৪ আগস্টের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সবশেষে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন সময়সূচি প্রকাশ করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। এরপর অবশিষ্ট পরীক্ষা না নেওয়ার দাবি করেন পরীক্ষার্থীরা। আর অটো পাস ঘোষণা না দিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণার দাবি জানান পরীক্ষার্থীরা। পরে অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো আর না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যেসব বিষয়ে পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ক্ষেত্রে সাবজেক্ট ম্যাপিং হবে। গত ১৫ অক্টোবর ফল প্রকাশিত হয়। এবার পরীক্ষায় মোট অংশ নেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। তাতে অকৃতকার্য হন ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৪৯ পরীক্ষার্থী। সাবজেক্ট ম্যাপিয়ে সব বিষয় পাস করলেও পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হন এসব পরীক্ষার্থী। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন