কোরআন আল্লাহ তাআলার কালাম; বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশা দেওয়ার জন্য নাজিল করা হয়েছে। কোরআন প্রচারক ছিলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। বাহক ছিলেন জিবরাঈল (আ.)। মক্কা-মদিনার বুকে দীর্ঘ ২৩ বছরে কোরআন নাজিল সম্পন্ন হয়েছে।
বিভিন্ন সুরায় কোরআন নিজেই তার পরিচয় ব্যক্ত করেছে। কোরআনের প্রতিটি আয়াতের প্রতি বিশ্বাস করা সব মুসলমানের জন্য অত্যাবশ্যক। সামান্য সন্দেহ বা কোনো অংশ নিয়ে অবিশ্বাসের কোনো সুযোগ নেই।
কোরআনের পরিচয় : কোরআন কী ও কেন—এ প্রশ্নের জবাব কোরআন নিজেই দিয়েছে।বর্ণিত হয়েছে, ‘আলিফ লাম মিম। এটা এমন একটি কিতাব, যার মধ্যে কোনো সন্দেহ-সংশয় নেই। এটি হচ্ছে আল্লাহভীরুদের জন্য পথপ্রদর্শক।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১-২)
কোরআনের ভাষা : আরবি ভাষায় কোরআন নাজিল করা হয়েছে।কারণ আরবী সবচেয়ে প্রাঞ্জল ও সবচেয়ে প্রশস্ত ভাষা। তাই আল্লাহ তাআলা তাঁর সবচেয়ে সম্মানিত কিতাব সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষায় সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুলের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতার মাধ্যমে সর্বশ্রেষ্ঠ ভূমিতে পাঠিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআনকে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ২)
প্রথম অবতীর্ণ আয়াত : নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয়েছে, সুরা আলাক থেকেই ওহির সূচনা হয় এবং এই সুরার প্রথম পাঁচটি আয়াত পর্যন্ত সর্বপ্রথম অবতীর্ণ হয়। প্রথম আয়াত থেকে ইসলামকেন্দ্রিক শিক্ষার গুরুত্ব প্রমাণিত হয়েছে।বর্ণিত হয়েছে, ‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা : আলাক, আয়াত : ১)
কোরআন নাজিলের মাস : ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, লাইলাতুল কদরে সমগ্র কোরআন লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হয়েছে। তারপর বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ ২৩ বছরে ধীরে ধীরে রাসুল (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। রমজানে কোরআন নাজিল প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে, ‘রমজান মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সৎপথের সুস্পষ্ট দিশা ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৫)
কোরআন বোঝা সহজ : কোরআন মুখস্থ করা, এর থেকে উপদেশ ও শিক্ষা অর্জন করা সহজ। এর আগে অন্য কোনো ঐশী গ্রন্থ এমন ছিল না। তাওরাত, ইনজিল ও জাবুরের কোনো হাফেজ নেই। আর কোরআনের হাফেজের অভাব নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, সুতরাং উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?’ (সুরা : ক্বামার, আয়াত : ১৭)
কোরআন মহৌষধ : কোরআন অন্তরের মহৌষধ। শিরক, কুচরিত্র ও আত্মিক রোগগুলো থেকে মুক্তিদাতা। এর থেকে মুমিনরা প্রতিনিয়ত উপকৃত হয় আর কাফেররা উপকৃত হতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি নাজিল করছি এমন কোরআন, যা মুমিনদের পক্ষে শিফা ও রহমত। তবে জালেমদের ক্ষেত্রে এর দ্বারা ক্ষতি ছাড়া অন্য কিছু বৃদ্ধি হয় না।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ৮২)
উত্তম কাহিনির বর্ণনা : কোরআনে শিক্ষা, উপদেশ ও হিকমতের অনেক গল্পগুচ্ছ স্থান পেয়েছে। এগুলোর পূর্ণাঙ্গ বিবরণ পেশ করা হয়নি। যেখানে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমার কাছে উত্তম কাহিনি বর্ণনা করেছি, যেভাবে এ কোরআন তোমার কাছে অবতীর্ণ করেছি।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৩)
কোরআন হেফাজতের দায়িত্ব : আল্লাহ তাআলা কোরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং তিনি নিজেই এর সংরক্ষণ ও হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন। এ জন্যই যুগ যুগ ধরে কোরআনের পাঠ, ভাষা ও অর্থ অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) এই স্মরণ (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর হেফাজত করব।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৯)
কোরআন পড়ার নির্দেশ : আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুল (সা.)-কে কোরআন পাঠ এবং তার দাওয়াতের কাজে নিয়োজিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সমগ্র জীবনে তা বাস্তবায়ন করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার রবের কিতাব থেকে যে অংশটুকু তোমার কাছে নাজিল হয় তা তিলাওয়াত করো এবং এর কথা পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারো নেই।’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ২৭)
কোরআন পড়ার নিয়ম : কোরআন তারতিলসহকারে পড়তে হয় । অর্থাৎ কোরআনের শব্দগুলো ধীরে ধীরে মুখে উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে তা উপলব্ধি করার জন্য গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনাও করতে হবে। বর্ণিত হয়েছে, ‘অথবা তার চেয়েও একটু বাড়ান। আর কোরআন তিলাওয়াত করুন ধীরে ধীরে সুস্পষ্টভাবে।’ (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৪)
সব বিষয়ে আলোচনা : ইবনে মাসউদ (রা.)বলেন, কোরআন আমাদের সব কিছুর জ্ঞান বর্ণনা করেছে এবং সব কিছু জানিয়েছে।কোরআনে দুনিয়া ও আখিরাতের প্রয়োজনীয় ও মৌলিক সব তথ্য আছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি তোমার ওপর এমন কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যা সব বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনাকারী আর মুসলমানদের জন্য হিদায়াত, রহমত ও সুসংবাদ।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৮৯)
তিলাওয়াতে ঈমান বাড়ে : একজন পরিপূর্ণ মুমিনের সামনে যখন কোরআনের আয়াত পাঠ করা হয় তখনই তার ঈমান বৃদ্ধি পায়। বর্ণিত হয়েছে, ‘মুমিন তো তারাই, যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করা হলে কম্পিত হয় এবং তাঁর আয়াতসমূহ তাদের কাছে পাঠ করা হলে তা তাদের ঈমান বর্ধিত করে। আর তারা তাদের রবের ওপর ভরসা করে।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২)
পবিত্র হয়ে কোরআন পড়া : কোরআন সর্বোচ্চ পবিত্র ও মর্যাদাসম্পন্ন একটি গ্রন্থ। তাই পবিত্রতা ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে কোরআন স্পর্শ করার জন্য, পাঠ করার জন্য দৈহিক পবিত্রতার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সম্পূর্ণ পবিত্র তারা ছাড়া অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না।’ (সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৭৯)