‘নির্বাচনের সময় সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা চাই’

বস্ত্র ও পাট এবং নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, নির্বাচনের সময়ে সব মন্ত্রণালয় ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দিতে হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর কমপক্ষে তিন বছর না হলে দলীয় মনোনয়ন যাতে না পান সেই জন্যও বিধান রাখা উচিত

আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কেমন চাই’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

সংগঠনের সভাপতি একরামুল হক সায়েমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন- নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু ও আয়োজক সংগঠন আরএফইডি’র সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর প্রমুখ।

সেমিনারে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দল সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজসহ অংশীজনদের সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুরো নির্বাচনি প্রক্রিয়া সঠিক হতে হবে। যে নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যকর করে না, সেটা প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন নয়। নির্বাচনের সময় সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। তা না করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

বদিউল আলম বলেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন প্রয়োজন। নিরপেক্ষ, সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন নিয়োগের এখতিয়ার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের নয়। এ সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, প্রজাতন্ত্রের মালিক যেন জনগণ হয়, সেজন্য কিছু সংস্কার প্রয়োজন। আমরা সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে ৩১ দফা  সুপারিশ  দিয়েছি।
নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন অবশ্যই সংস্কার করতে হবে উল্লেখ করে রিপন বলেন, কোনো আসনে কেউ যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত না হন সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে সেখানে পুনরায় নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন আহবান করতে হবে। তিনি উচ্চ আদালতে ২৩ জন বিচারক নিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন, বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রেও কিছু নীতিমালা থাকতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, নির্বাচন চলাকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কোনো আদালতের রিট গ্রহণ করা যাবে না। এ ব্যাপারে আইন থাকতে হবে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়ে সংবিধানে এক ধারার সাথে আরেক ধারার সাংঘর্ষিক শব্দ ব্যবহার নিরসন করতে হবে। দুই বারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট যাতে না থাকতে পারেন তারও বিধান থাকতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, নির্বাচনি ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংশোধন করে সংবিধানে তা স্থায়ীভাবে সন্নিবেশিত করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে  কয়েকটি নির্বাচন অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য হয়েছে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল ভোট ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। এনআইডি ব্যবস্থাপনা নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক কিংবা দলীয় মনোনয়ন থাকবে না।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, শুধু একটি নির্বাচন করার জন্য এই গণঅভ্যুত্থান হয়নি। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইলে নিরপেক্ষ প্রশাসন প্রয়োজন। সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান করতে হবে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে কারো সমস্যা থাকার কথা না। রাজনৈতিক দলগুলোর বাজেট নিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে দলীয় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, কমিশনগুলো কিভাবে কাজ করবে সেটা এখনও সুনির্দিষ্টভাবে জানানো হয়নি। বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নির্বাচন সুষ্ঠু করার আগ্রহ নেই। তারা নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পেতে চায়। অন্তত তিন থেকে পাঁচটি নির্বাচন নির্বাচনকালীন অন্তর্র্বতী সরকারের অধীনে হতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে একটি স্বতন্ত্র সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করতে হবে। না ভোটের বিধান থাকা দরকার। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন সহজ করতে হবে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, নির্বাচন সংস্কার অন্তর্র্বর্তী সরকারের মুখ্য দায়িত্ব। নির্বাচনকালীন সরকার কে থাকবে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতটুকু কাজ প্রয়োজন সেটুকু করুক অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার স্থায়ী হবে কি না সেই সিদ্ধান্তও নিতে হবে রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে।

এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, প্রার্থীরা প্রিজাইডিং অফিসার ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। নির্বাচনের সময় কে ডিসি, কে এসপি সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

আরএফইডি’র সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর বলেন, রাজনৈতিক দল গুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব, প্রবাসীদের ভোটার, পোস্টাল ভোট ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা নিরসনে নির্বাচন সং¯কার কমিশনকে কাজ করতে হবে।