পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব শুরু আজ

সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাঁচ দিনের সর্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব আজ মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে। সকালে মন্দিরে মন্দিরে দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা এবং সন্ধ্যায় আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে সারা দেশে শুরু হবে দুর্গোৎসব। আগামী ১৩ অক্টোবর রোববার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৫ দিনব্যাপী এ উৎসব শেষ হবে।

দুর্গা শব্দের অর্থ হলো ব্যুহ বা আবদ্ধ স্থান। যা কিছু দুঃখ-কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রণা এসব থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামের অন্য একটি অর্থ করেছেন। দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্য ক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।

‘মহাচণ্ডী’তে উল্লেখ আছে, ত্রেতা যুগে রাজা রামচন্দ্র দশানন রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে রত হন। পাপের বিনাশের লক্ষ্যে দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার কাছে শক্তি বৃদ্ধির আশায় শরৎকালে তার পূজা করেছিলেন এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে দেবী সীতাকে উদ্ধার করেন ও রাবণকে হত্যা করতে সক্ষম হন রাম চন্দ্র। সেই থেকে পৃথিবীতে প্রতিবছর শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গোৎসব পালন করে আসছেন।

লোকনাথ পঞ্জিকা অনুযায়ী, আজ ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী, ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহা-অষ্টমী ও ১২ অক্টোবর মহানবমী এবং ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে শারদীয় দুর্গোৎসবের।

এ বছর দেবী দুর্গার আগমন হবে দোলায় বা পালকিতে। ওই পালকি বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে ফলাফল হয় মড়ক। এ বছর দেবী আগমন যেহেতু দোলায় হচ্ছে, তার ফলাফল হতে পারে মড়ক। যা শুভ ইঙ্গিত নয়। এ ছাড়া দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। শাস্ত্রমতে, দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল ছত্রভঙ্গ হয়। সেই নিরিখে এ বছর দেবীর গমন ঘোড়ায় হওয়ার জেরে ছত্রভঙ্গ হতে পারে। শাস্ত্রমতে, এই ঘোটকে গমনের ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক এলোমেলো অবস্থাকে ইঙ্গিত করে। এটি যুদ্ধ, বিগ্রহ, অশান্তি, বিপ্লবের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।

রামকৃষ্ণ মিশনের নির্ঘণ্টে বলা হয়েছে, আজ বুধবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে দুর্গাদেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা বিকাল ৫টার পরে আরম্ভ হবে।

পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। সারা দেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাকঢোল, কাঁসর এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মণ্ডপ।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা বুধবার থেকে শুরু হয়ে ১৩ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। সারা দেশে এ বছর ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। ঢাকা মহানগরে এ বছর ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হবে।

রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসাবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছা রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

অপরাধে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে : এদিকে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে অপরাধমূলক কাজে জড়িত পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিগত সময়ে যেসব পুলিশ অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতঃপূর্বে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের আমরা গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। দুর্গাপূজা ঘিরে ঢাকা মহানগরীতে হামলার আশঙ্কা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের জানামতে এমন কোনো আশঙ্কা নেই। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ঝুঁকি আমরা দেখছি না। আশা করি, সবাই সুন্দরভাবে পূজা উদযাপন করবেন। তবু আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করব।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা মহানগরে এ বছর ২৫৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। বিজয়া দশমী পর্যন্ত উৎসব উদযাপনে বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেবি বিসর্জনের জন্য নগরীর ১৫টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সব ধরনের মাদকদ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধের কথা জানিয়ে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে তিনি দেবী বিসর্জন প্রক্রিয়া শেষ করার আহ্বান জানান।