অনেক নেক কাজ করেও কেয়ামতে যে হবে নিঃস্ব

অনেক মানুষ আছে প্রচুর নেক কাজ করে। নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, দান-সদকাও করে। কিন্তু মানুষের ওপর জুলুম ছাড়তে পারে না। অন্যের ওপর অন্যায় করার অভ্যাস ত্যাগ করতে পারে না। তুচ্ছ মনে করেই অন্যের ওপর অন্যায় করে যায়।

জুলুম তো শুধু অন্যকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা নয়। শারীরিকভাবে নির্যাতন তো জুলুম অবশ্যই, পাশাপাশি পরনিন্দা, অপবাদ, গালি, অন্যের সুনাম, সম্মান নষ্ট করা এগুলোও জুলুম। এগুলোকে অনেকে খুব তুচ্ছ মনে করে। কিন্তু কেয়ামতের দিন এই অন্যায়গুলো কাল হয়ে দাঁড়াবে। প্রচুর নেক আমল করার পরও এ সব জুলুমের কারণে নিঃস্ব ও অসহায় হতে হবে।

নিঃস্ব বা অসহায় বলতে আমরা এমন ব্যক্তিদের বুঝি যাদের অর্থ-সম্পদ নেই। কিন্তু আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কী বলছেন দেখুন! তিনি দুনিয়ার কোনো অভাবীকে নিঃস্ব বা অসহায় বলেননি। দুনিয়ার জীবন তো ক্ষণস্থায়ী। দুনিয়ার অসহায়ত্বও ক্ষণস্থায়ী। প্রকৃত নিঃস্ব সেই যে কেয়ামতের দিন নিঃস্ব হবে। দুনিয়ায় আমল করার পরও সর্বহারা হবে।

আবু হুরায়ারা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন তার সাহাবিদের বললেন, আপনারা কি জানেন নিঃস্ব ব্যক্তি কে? সাহাবিরা বললেন, আমরা তো মনে করি, যার ধনসম্পদ নেই, সে-ই নিঃস্ব।

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে প্রকৃত নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কেয়ামতের দিন দুনিয়া থেকে নামাজ, রোজা ও জাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে; কিন্তু পাশাপাশি সেসব লোকেদেরও নিয়ে যাবে যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারও বিরুদ্ধে অপবাদ রটিয়েছে, কারও সম্পদ ভোগ করেছে, কাউকে হত্যা করেছে, কাউকে প্রহার করেছে; এ ধরনের লোকদের তার নেকিগুলো দিয়ে দেওয়া হবে। যখন তার নেকি শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের পাওনা তখনো বাকি, তখন তাদের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে হবে আর তাকে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহিহ মুসলিম)

তাই অন্যের ওপর জুলুম করার ব্যাপারে খুব সাবধান থাকতে হবে। যেসব গুনাহ আল্লাহর হকের সাথে সম্পর্কিত তা আল্লাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন; তিনি রাহমানুর রাহিম। কিন্তু তিনি যেহেতু ন্যায়বিচারক, বান্দার হক তিনি ক্ষমা করবেন না। বান্দার হকের ক্ষমা বান্দার কাছেই পেতে হবে। দুনিয়াতে ক্ষমা চেয়ে ক্ষমা না করালে কেয়ামতের দিন নিজের নেক কাজ তাকে দিয়ে দিতে হবে, তার পাপের বোঝা বহন করতে হবে; যে দিন একটা নেক কাজের মূল্য হবে সারা দুনিয়া এবং এর সব সম্পদের চেয়ে বেশি।তাই মৃত্যুর আগেই নিজের কৃত জুলুম ও অন্যায়গুলোর জন্য অনুতপ্ত হওয়া উচিত। কোনো দাবি-পাওনা থাকলে, মিটিয়ে নেওয়া উচিত। ক্ষমা করিয়ে নেওয়া উচিত। রাসুল (সা.) বলেন, কারো উপর তার ভাইয়ের কোনো দাবি থাকলে সে যেন তা থেকে মুক্ত হয়। কারণ কেয়ামতের দিন পাওনা পরিশোধের জন্য টাকা-পয়সা থাকবে না। তখন অন্যায়ের সমপরিমাণ সওয়াব পাওনাদারের জন্য নিয়ে নেওয়া হবে। সওয়াব না থাকলে পাওনাদারের গুনাহগুলো তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি)