অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগের বিষয়ে দলীয় অবস্থান ঠিক করতে ছয়টি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এই কমিটিগুলো অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার বিষয়ে দলের কর্মকৌশল ঠিক করবে। দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে বিএনপি তাদের মতামত ও সুপারিশ জাতির সামনে তুলে ধরবে।
গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
গঠিত কমিটিগুলো হলো—সংবিধান সংশোধন, বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসংক্রান্ত সংস্কার কমিটি।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্র সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত জানান। এসব কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে কমিশনগুলো পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মূলত সরকার গঠিত কমিটির সংস্কারবিষয়ক কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে দলের কৌশল তৈরি ও সে অনুসারে প্রাসঙ্গিক কাজ প্রণয়ন করতে কাজ করবে তারা। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি যাতে তাদের পরামর্শ তুলে ধরতে পারে সেই প্রস্তুতিও নেবে এসব কমিটি।
দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের অংশ হিসেবে আগামী শনিবার থেকে আবার বৈঠক করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই বৈঠকে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেবে।বৈঠকে বিএনপি কিছু বিষয়ে তাদের প্রাথমিক প্রস্তাব তুলে ধরতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সংস্কারের বিষয়ে দলের অবস্থান নির্ধারণ ও প্রসঙ্গিক কাজ করাই হবে বিএনপি গঠিত সংস্কারবিষয়ক কমিটির মূল কাজ। সরকার চাইলে বিএনপি সংস্কার নিয়ে আলোচনা করবে।
কোন কমিটিতে কারা আছেন
স্থায়ী কমিটির সভায় প্রস্তাবিত ছয়টি কমিটির মধ্যে সংবিধান পুনর্গঠন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। সদস্য আছেন—স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, অধ্যাপক ড. মাহফুজুল হক সুপন ও প্রফেসর ড. নাজমু জামান ভূঁইয়া ইমন।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে। সদস্য হলেন—অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি মোহাম্মদ রইস উদ্দিন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বিচারক ইকতেদার হোসেন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসিম।
পুলিশ বিভাগ সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ বীরবিক্রম। সদস্য হচ্ছেন—সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জহিরুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি আবদুল কাইউম, সাবেক ডিআইজি খোদা বক্স ও সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান।
প্রশাসন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে। সদস্যরা হলেন—সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান খান।
দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব করা হয়েছে সাবেক বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি শরফুদ্দিন চাকলাদার ও বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমানের নাম। সদস্য হচ্ছেন—ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও সাবেক সচিব আবদুর রশিদ।
নির্বাচন কমিশনবিষয়ক সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানকে। সদস্য হচ্ছেন—স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক সচিব আবদুর রশিদ।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে—এসব বিষয় তাঁরা বিশ্লেষণ করেছেন। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, তা তারা কিভাবে সম্পন্ন করতে চাইছে অর্থাৎ সংস্কারের রোডম্যাপ কেন দেওয়া হচ্ছে না, সংস্কার কবে নাগাদ হবে—এসব বিষয়েও আরো স্পষ্টীকরণ চাইছেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতারা। কয়েকজন নেতা মনে করেন, সংস্কারের বিষয়ে সরকার সময়ক্ষেপণ করছে।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, পতিত শেখ হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে। হত্যা মামলার পরও এসব আসামি কিভাবে পালালেন, কারা তাঁদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে—এসব বিষয়ে জনমনে উদ্বেগ আছে বলে বৈঠকে আলোচনায় আনেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।