আমার স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করায় বন্ধু রিপনকে এক্কেবারে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছি স্যার। মাসুদ যখন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এভাবে বলছিল তখন মাসুদের স্ত্রী রহিমা আক্তার প্রিয়া ম্যাজিস্ট্রেটকে বলে উঠেন, স্যার আমি রিপনের পা চেপে ধরেছি, আর মাসুদ বটি দা দিয়ে রিপনকে জবাই করেছে। স্বামী-স্ত্রীর অনর্গল স্বীকারোক্তি দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলেন দুই ম্যাজিস্ট্রেট।
এমন সময় মাসুদ ম্যাজিস্ট্রেটকে বলে উঠে, আমরা প্রেম করে বিয়ে করেছি স্যার। আমার স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করবে, আর আমি তাকে দুনিয়ায় বাঁচতে দিমু তা হতেই পারে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজধারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার সময় রিপন কাজী হত্যা মামলার আসামী মাসুদ ও তার স্ত্রী প্রিয়া এভাবেই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন বলে আদালত সূত্র জানায়।
জানা গেছে, সাভারের হরিণধরা এলাকায় জনৈক সুমনের দুটি ছয়তলা বাড়ি একটির নীচতলায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন লক্ষ্মীপুরের মাসুদ। অপর বাড়ির নীচতলায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন ফরিদপুরের ভাঙ্গার রিপন কাজী। তারা দুজনে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দুই বন্ধু ইয়াবার নেশায় আসক্ত। প্রায় সময় মাসুদের বাসায় বসে ইয়াবা সেবন করতো রিপন। এই সুবাদে মাসুদের সুন্দরী স্ত্রী প্রিয়ার ওপর নজর পড়ে রিপনের। সে সুযোগ পেলেই নানা বাহানায় প্রিয়াকে উত্যক্ত করতো। প্রিয়া ভয়ে বিষয়টি স্বামীকে জানাত না।
এদিকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার দিকে রিপন বাসা থেকে বের হ২। রাত পৌনে ১২টার দিকে তার স্ত্রী ফোন করলে রিপন জানায়, জরুরি কাজ আছে। বাসায় ফিরতে দেরি হবে। রাত দুইটার দিকে রিপনের স্ত্রী লাইজু বেগম কল করতে গেলে স্বামীর ফোন বন্ধ পান। এরপর তিনি ফোনে বিভিন্ন জনের কাছে খোঁজখবর নিতে থাকেন। কিন্তু রিপনের কোন হদিস মিলছিল না। লাইজু বেগম পরদিন (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ১১টার দিকে মাসুদের বাসার সামনে দিয়ে নিজের বাসায় ফিরছিলেন। বাসার সামনে মাসুদ ও প্রিয়াকে দেখতে পান। তাদেরকে রিপনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তারা সন্দেহজনক আচরণ করে এবং কৌশলে পালিয়ে যায়।
এরপর লাইজু বেগম দেখতে পান মাসুদের বাসা তালাবন্ধ। তিনি বাড়িওয়ালা সুমনকে সঙ্গে নিয়ে তালা ভেঙ্গে দেখতে পান খাটের পাশে পরে আছে রিপন কাজীর জবাই করা ক্ষতবিক্ষত নিথর দেহ।
খবর পেয়ে সাভার থানা পুলিশ রিপনের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মর্গে পাঠায়। এ ব্যাপারে রিপন কাজীর বাবা মোঃ হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব বাদী হয়ে সাভার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ এর তত্ত্বাবধান ও সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ জুয়েল মিঞার নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ১৬ সেপ্টেম্বর(সোমবার) রাত সাড়ে ১০টায় হেমায়েতপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাসুদ ও তার স্ত্রী প্রিয়াকে গ্রেফতার করে।
সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা বলেন, রিপনের মৃতদেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা ঘাতক স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। তারা রিপনকে খুনের দায় স্বীকার করেছেন।
১৭ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুজাহিদুল ইসলাম ও এম সাইফুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন ঘাতক স্বামী- স্ত্রী।
আদালতকে তারা জানান, ঘটনার রাতে(১৪ সেপ্টেম্বর) বৃষ্টি হচ্ছিল। রাত পৌনে ১২টার দিকে মাসুদ বাসা থেকে বেরিয়ে সিগারেট আনতে যায়। এ সুযোগে মাসুদের বাসায় ঢুকে রিপন। সে মাসুদের স্ত্রী প্রিয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। রিপন ও প্রিয়ার মাঝে ধস্তাধস্তি চলতে থাকে। এক পর্যায়ে মাসুদ বাসায় ঢুকে এ দৃশ্য দেখতে পায়।
মাসুদ খাটের নীচে থাকা বটি দা দিয়ে রিপনকে কুপ দেয়। এরপর প্রিয়া রিপনের পা চেপে ধরে আর মাসুদ রিপনকে জবাই করে। রাতে বাসায় থাকা পুরনো কাপড় দিয়ে রক্ত পরিষ্কার করে স্বামী স্ত্রী দুজনে। রাতভর না ঘুমিয়ে তারা রিপনের মৃতদেহের পাশে বসে তা গুম করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি বড় ডামও কিনে আনে মাসুদ। কিন্তু এরই মধ্যে ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।