সিরিজ জয়ে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৮৫

বাংলাদেশের পেসারদের বোলিং তোপে রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে দাঁড়াতেই পারলেন না পাকিস্তানের ব্যাটাররা। দুই টাইগার পেসার তাসকিন ও নাহিদ রানা যেনো উইকেট তুলে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। এই দুই পেসার তুলে নিয়েছেন পাকিস্তানের ৯ উইকেট। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো এক ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন হাসান মাহমুদ। যার ফলে পাকিস্তান থেমেছে ১৭২ রানে। স্বাগতিকদের বিপক্ষে জয় এবং হোয়াটওয়াশের জন্য ১৮৫ রান করতে হবে টাইগারদের। আগের ম্যাচে স্বাগতিকদের ১০ উইকেটে হারিয়েছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

রাওয়ালপিন্ডিতে গতকালের (রবিবার) দুই উইকেটে ৯ রান নিয়ে আজ চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেছিল পাকিস্তান। পাকিস্তানের হয়ে মাঠে নামেন আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটার সাইম আইয়ুব আর তার সঙ্গে ক্রিজে নামেন শান মাসুদ।

এই দুই ব্যাটারই দেখেশুনে খেলতে থাকেন। ক্রমেই বাংলাদেশের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠছিল এই জুটি। অবশেষে এই জুটিকে থামিয়ে বাংলাদেশকে স্বস্তি এনে দিলেন তাসকিন। তাসকিনের বলে মিড অফে শান্তর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে গেলেন সাইম আইয়ুব। আউট হওয়ার আগে করেন ৩৫ বলে ২০ রান। তার বিদায়ে ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান।

সাইম আইয়ুবের বিদায়ের পর বাবর আজমের সঙ্গে জুটি বাঁধেন শান মাসুদ। তবে এই জুটিক বেশিদূর এগোতে দেননি নাহিদ রানা। চতুর্থ দিনে বোলিংয়ে এসেই নিজের প্রথম ওভারেই তিনি তুলে নিলেন উইকেট। নাহিদ রানার বলে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে গেলেন শান মাসুদ। তার বিদায়ে ৬২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান

দলের বিপদ আরও বাড়িয়ে সাজঘরে ফিরে যান বাবর আজম। তাকেও ফেরান নাহিদ রানা। নাহিদ রানার বলে প্রথম স্লিপে সাদমান ইসলামের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান বাবর। বাবরের বিদায়ে মাত্র ৬৫ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে পাকিস্তান।

বাবরের বিদায়ের পর একই ওভারে নাহিদের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যেতে পারতেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে নাহিদের বলে ক্যাচ তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন সাদমান। যার ফলে জীবন পান রিজওয়ান।

তবে রিজওয়ানকে না পারলেও নিজের তৃতীয় ওভারে সৌদ শাকিলকে ফিরিয়ে টানা তিন ওভারেই উইকেট নিলেন নাহিদ রানা। নাহিদ রানার বলে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন শাকিল। তার বিদায়ে ৮১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে স্বাগতিকরা।

৮১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়া পাকিস্তান দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন জীবন পাওয়া রিজওয়ান। আগা সালমানকে সঙ্গে নিয়ে লাঞ্চ বিরতির আগের সময়টুকু নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন তিনি। লাঞ্চ বিরতির আগে আর কোনো বিপদ হয়নি পাকিস্তানের। যার ফলে ৬ উইকেটে ১১৭ রান করে লাঞ্চ বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা।

বিরতি থেকে ফিরে আগা সালমানকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন। প্রথম টেস্টেও বাংলাদেশকে ভুগিয়েছিলেন তিনি। তবে আজ ভয়ঙ্কর ওঠার আগেই তাকে থামালেন হাসান মাহমুদ। হাসান মাহমুদের বলে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান ৭৩ বলে ৪৩ রান করা রিজওয়ান। তার বিদায়ে ভাঙে ৫৫ রানের জুটি।

রিজওয়ানের বিদায়ের পরের বলেই মোহাম্মদ আলিকে ফেরান হাসান মাহমুদ। হাসান মাহমুদের বলে স্লিপে শান্তর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে শূন্য রানেই সাজঘরে ফিরে যান তিনি। তার বিদায়ে ১৩৬ রানে ৮ উইকেট হারায় পাকিস্তান।

হাসান মাহমুদের জোড়া আঘাতের পর পাকিস্তান শিবিরে আঘাত হানেন আরেক পেসার নাহিদ রানা। আবরার আহমেদকে ফিরিয়ে নিজের চতুর্থ উইকেট শিকার করেন তিনি। নাহিদ রানার বলে স্লিপে শান্তর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান আবরার আহমেদ। আউট হওয়ার আগে করেন ১২ বলে ২ রান।

আবরার আহমেদের বিদায়ের পর মির হামযাকে নিয়ে বাংলাদেশি বোলারদের ওপর চড়াও হতে থাকেন আগা সালমান। শেষ উইকেটে তারা গড়লেন ২৭ রানের জুটি। তাতেই বাংলাদেশের সামনে টার্গেট হয় ১৮৫। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন সালমান আগা।

এর আগে রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় দিনের বিনা উইকেটে ১০ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমেই খেই হারিয়ে ফেললো টাইগার ব্যাটাররা। পাকিস্তানের বোলিং তোপে তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায় বাংলাদেশের ব্যাটং লাইন-আপ। যার ফলে মাত্র ২৬ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। এরফলে শঙ্কা জাগে ফলো-অনের।

তবে এরপরেই জুটি গড়ে দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তুলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও লিটন দাস। এই দুই ব্যাটারের ১০০ রানের জুটিতে ভর করে ফলো-অন এড়ায় বাংলাদেশ। এই জুটিতে ভর করে বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল টাইগাররা। তবে ১৬৫ রানেই থামতে হয় এই জুটিকে। দলীয় ১৯১ রানে মিরাজের বিদায়ে ভেঙে যায় এই জুটি। মিরাজ ফিরে গেলেও ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন লিটন। পাকিস্তনের বিপক্ষে আজ তিনি ১৭১ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। তার সেঞ্চুরিতে ভর করে বিপর্যয় কাটিয়ে ২৬২ রানে থামে বাংলাদেশ।

১২ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ রান তুলতেই ২ উইকেট হারিয়ে বসেছে পাকিস্তান। এরপরেই তৃতীয় দিনের খেলা সমাপ্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা।