শিক্ষার্থীর লেখা নিজ নামে ছাপানোর অভিযোগ জাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর লেখা নিজের নামে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) উপাচার্য বরাবর এ অভিযোগ জমা দেন ভুক্তভোগী সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মাস্টার্সের থিসিস গ্রুপের শিক্ষার্থী জেসমিন ।

জেসমিন তার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, তৃতীয় বর্ষের (২০২১ সাল) ৩০৯ নং কোর্সের (কোর্স টাইটেল: পলিটিখ্যাল ইকোনমি অব বাংলাদেশ) কোর্স শিক্ষক ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া তার একটি অ্যাসাইনমেন্টের প্রশংসা করেন। এর কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন তিনি ফোন দিয়ে রচনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালে প্রকাশ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ইতোমধ্যে জেসমিন অন্য আরেকজন সুপারভাইজারের তত্ত্বাবধানে রচনাটি প্রকাশ করার জন্য কাজ শুরু করেন। ইখতিয়ার উদ্দিন ওই সুপারভাইজারের কাছ থেকে রচনাটি এনে তার তত্ত্বাবধানে প্রকাশ করার জন্য বলেন জেসমিনকে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও জেসমিন রচনাটি এনে ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়ার তত্ত্বাবধানে প্রকাশ করতে সম্মত হন।

জেসমিন বলেন, ‘কিছুদিন পর তিনি (ইখতিয়ার) আমার রচনাটি কোনোরূপ পরিবর্তন ছাড়াই “Becoming An Asian Tiger: What Lesson Bangladesh Can Get From East Asian Miracle?” শিরোনামে International Journal of Social Science and Human Research জার্নালে ২০২১ সালের মার্চ ইস্যুতে প্রকাশ করেন। তিনি আমার রচনাটি হুবহু প্রকাশ করার পরও আমাকে অবগত না করে তার নাম প্রথম লেখক হিসেবে দিয়েছেন এবং আমার নাম দ্বিতীয় লেখক হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া তখন আমি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার টাইটেলে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করেন।’

পরবর্তীতে টাইটেল সংশোধন করার অনুরোধ করলেও ওই শিক্ষক তা আমলে নেননি অভিযোগ করে জেসমিন বলেন, ‘রচনাটি প্রাথমিক ড্রাফট হিসেবে থাকায় এবং পরে কোনোরূপ এডিট না করায় প্ল্যাজিয়ারিজম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া আমার টাইটেলে ভুল থাকায় প্রকাশনাটি আমার ভবিষ্যৎ শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে আমি তখন থেকেই আশঙ্কায় থাকি।’

এই ঘটনায় জেসমিন তখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং এটি তার শিক্ষা ও স্বাভাবিক জীবন-যাপনকেও ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করে বলে জানান। জেসমিন অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ‘বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তার (ইখতিয়ার উদ্দিন) অবৈধ ক্ষমতাচর্চা এবং সুবিচার না পাওয়ার শঙ্কায় তখন আমি অভিযোগ করতে সাহস পাইনি। আমার সম্মতি ছাড়াই ভুল তথ্য ব্যবহার করে আমার একাডেমিক এবং ক্যারিয়ারকে হুমকির সম্মুখীন করায় জনাব ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া’র যথাযথ বিচার দাবি করছি।’

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সহযোগী অধ্যাপক ইখতিয়ার উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘এই লেখাটি জার্নালে প্রকাশের জন্য সে আমাকে বলেছিল, এবং সে একটি মডিফাইড কপি আমাকে মেইল করেছিল প্রকাশের জন্য। আর এই বিষয় নিয়ে তার যদি কোনো সংশয় থাকে সে জার্নালে ফোন দিয়ে এটি উইথড্র করে নিলেই পারত। এটা শুধু একটা অনলাইন জার্নাল ছিল। আর এটা আমি আমার প্রোফাইল বা অন্য কোথাও সংযুক্ত করিনি।’

সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক তারানা বেগম বলেন, ‘আজকে আমরা একটা অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। এটা এখনো আমি দেখতে পারিনি। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে এবং শিক্ষকদের সভার মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’