ত্রাণ থাকলেও পৌঁছানো কঠিন

ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ফেনী, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িসহ দেশের ১৪ জেলা। কোথাও বুক সমান পানি। কোথাও আবার শুধু বাড়ির চাল পানির উপরে আছে। এমন বিপর্যয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষ। বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। তবে সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে যাতায়াত ব্যবস্থা। মাঠ পর্যায়ে কাজ করা একাধিক স্বেচ্ছাসেবক এমনটাই জানিয়েছেন। তারা জানান, বেশিরভাগ অঞ্চলেই সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যোগাযোগের একমাত্র উপায় এখন নৌপথ। তবে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় সাধারণ নৌকা সেখানে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা স্পিডবোট যেগুলো স্রোতের বিপরীতে চলতে সক্ষম শুধু সেগুলো দিয়েই উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে। তবে তাতেও রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। ফেনীতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘মাঠে যে কত চ্যালেঞ্জ তা দূর থেকে বোঝা যাবে না। এখানে বাস্তবতা পুরাটাই আলাদা। অনেক মানুষ আসছেন কিন্তু এসে বিপদে পড়ছেন। অনেকে ত্রাণ নিয়ে আসছেন, কিন্তু এই ত্রাণ কীভাবে পৌঁছে দিবেন সেটা জানে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানে নেটওয়ার্ক নেই। উদ্ধারকাজে গিয়ে বোট আটকে যাচ্ছে। অনেক বোটের তলা ফেটে গেছে। অনেক উদ্ধারকারী আহত হচ্ছেন।’ মানুষের এমন বিপদে কেউ কেউ আবার লোক দেখানো ত্রাণকার্য পরিচালনা করছেন বলেও অভিযোগ করেন এ স্বেচ্ছাসেবক। তার দাবি- সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে এসেছেন কিন্তু ত্রাণ বিতরণে দরকার সঠিক পরিকল্পনা। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ উদ্ধারকাজ পরিচালনা। পূর্বাঞ্চলের মানুষে বন্যার সঙ্গে পরিচিত না। ফলে কীভাবে নিজেদের রক্ষা করতে হয় সে বিষয়ে তাদের কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। তিস্তার পানি ছেড়ে দিলে রংপুরের মানুষ কীভাবে নিজেকে বাঁচাবে তা বছরের পর বছর ধরে সে শিখতে থাকে। ফলে নোয়াখালী ফেনীর মানুষকে উদ্ধার করাটাই বড় কাজ ছিল। আর এখন দীর্ঘদিন ত্রাণ লাগবে তাদের। সেটা বিতরণে একটা সমন্বিত পরিকল্পনা করা জরুরি। সবাই যার যার জায়গা থেকে সহায়তা করবে কিন্তু সেটা বিতরণের ব্যাপারে যদি সমন্বিত রূপ না থাকে তাহলে দেখা যাবে এক অঞ্চলের মানুষ বেশি সাহায্য পাবে, কোনও কোনও জায়গার মানুষ বঞ্চিত রয়ে যাবে। বন্যাকবলিত এলাকায় সহযোগিতার জন্য ত্রাণ সংগ্রহের কাজ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) প্রাঙ্গণে চলছে ত্রাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ। সরেজমিন দেখা যায়, প্রবেশপথের পাশে ‘গণ-ত্রাণ সংগ্রহ’ বুথ বসানো হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ মানুষ এসে নানা ধরনের ত্রাণ এখানে দিয়ে যাচ্ছেন। এগুলো পৌঁছানো হবে বন্যাকবলিত এলাকায়। এত বড় দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণে সমন্বিত পরিকল্পনা এখন খুব জরুরী।