হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ

বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, জমি দখল, নির্যাতন ও মন্দির ভাঙচুরের প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। হামলা বন্ধ করাসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে শনিবার (১০ আগস্ট) তারা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।

ফেনী:
সনাতনী ছাত্র-জনতার ব্যানারে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। মিছিলটি ফেনীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে থেকে শুরু হয়। পরে সেটি ফেনী সরকারি কলেজ মাঠে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা এসময়  ‘আমার ঘরে হামলা কেন, জবাব চাই জবাব দাও’, ‘জাতপাত নিপাত যাক’, ‘সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

সনাতনী ছাত্র ও জনতার সমন্বয়ক উৎফল শীল বলেন, ‘প্রতিবারই  সরকার পরিবর্তন হয়, কিন্তু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। সবাই আমাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেন। ক্ষমতার পরিবর্তনের সময় এলেই একটি গোষ্ঠী আমাদের মন্দিরে হামলা চালায় ও মা-বোনদের নির্যাতন করে। সম্পদ লুটপাট করে আমাদের অন্য দেশে চলে যেতে বাধ্য করে। এগুলো করছে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই।’

তাপস পাল নামে একজন বলেন, ‘সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন গঠন, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সব হামলা প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সংখ্যালঘুদের জন্য ১০ শতাংশ সংসদীয় আসন বরাদ্দসহ আমাদের আট দফা দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি সরকারকে।’

লক্ষ্মীপুর: 
মন্দিরে হামলার প্রতিবাদে লক্ষ্মীপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে হিন্দু সম্প্রদায়। এ সময় নিরাপত্তার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা গেছে তাদের। আজ বিকালে শহরের প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান প্রধাণ সড়ক প্রদক্ষিণ করেন তারা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‌জন্মসূত্রে এই দেশ আমাদের সবার। এখানে আমাদের নিরাপত্তা চাই। দেশে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক আমাদের সমস্যা নেই। আমাদের দাবি তারা যেনো আমাদের বাসস্থান ও ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা না চালান। আমরা নিরাপত্তা চাই।

কক্সবাজার: 
‘জ্বলছে স্বদেশ, জ্বলছে মানবতা’ এই স্লোগানে ৮ দফা দাবি আদায়ে কক্সবাজার শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়। সংখ্যালঘু ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে কক্সবাজারের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

ফরিদপুর: 
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে ঘন্টাব্যাপী সম্মিলিত হিন্দু সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে অংশ নিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষ উপস্থিত হন।

 

বক্তারা বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির, হিন্দুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। বিগত দিনে হিন্দু নির্যাতনের কোনো বিচার না হওয়ায় দুর্বৃত্তরা এই কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ পাচ্ছে।

শরীয়তপুর:
শহরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে ঢাকা-শরীয়তপুর মহাসড়কে মানববন্ধন করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট শরীয়তপুর জেলা শাখা। দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে নির্যাতন করছে দুষ্কৃতকারীরা বলে অভিযোগ করেন হিন্দু নেতারা।

পঞ্চগড়:
সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন ও মন্ত্রণালয় গঠনসহ বিভিন্ন দাবিতে পঞ্চগড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। পঞ্চগড় জেলা শহরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। এক পর্যায়ে হিন্দু ছাত্র-জনতা কিছু সময় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

এদিকে, শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আয়োজনে বোদা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার চত্বরে সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে  সহস্রাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন অংশ নেন।

সমাবেশে বক্তরা বলেন, এই দেশে আমাদের জন্ম, আমাদের বাপ-দাদার জন্ম। আমরা এই দেশ ছেড়ে কোথাও যাব না। সম্প্রীতির রক্ষার মাধ্যমে দেশ গড়ার অঙ্গিকার নিয়েছি আমরা।

চাঁদপুর:
শনিবার সন্ধ্যায় শহরের গোপাল জিউর আখরায় বৈঠক করেন সনাতনী ছাত্র, যুবক, জনতা। এসময় তারা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা প্রতিরোধে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করেন।

চাঁদপুরের সনাতনী ছাত্র-জনতা সমন্বয় কমিটির সদস্য তিথী সরকার বলেন, ‌‘আমরা এ দেশের নাগরিক। এ দেশে আমরা কেনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবো? আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে যেকোন সহিংসতা মোকাবেলায় রাজপথে রয়েছি।’

কুষ্টিয়া:
বিকেলে কুষ্টিয়া শহরের একতারা মোড়ে জড়ো হয়ে সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দুদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পরে মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি এন এস রোড প্রদক্ষিণ করে পৌরসভা চত্বরে এসে শেষ হয়। সেখানে সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রতিটি লড়াই-সংগ্রামে সব সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে অংশগ্রহণ করে। দেশে কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেই হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুর হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয়, লুটপাট করা হয়। যেকোনো ধরনের ইস্যু আসলেই হিন্দু সম্প্রদায়ের জানমালের ওপর আঘাত করা হয়, নারীদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন হয়। স্বাধীন দেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নেই কেন? আমরা নিরাপত্তা চাই।-রাইজিংবিডি.কম