কোটাবিরোধী আন্দোলনে সতর্ক দৃষ্টি সরকারের

কোটাবিরোধী চলমান ছাত্র আন্দোলনের দ্রুত অবসানের উপায় বের করার চেষ্টা করছে সরকার। এ আন্দোলন বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ায় সরকারের মধ্যে উদ্বেগও তৈরি হচ্ছে। তবে বিষয়টি আদালতে অবস্থান করায় এ মুহূর্তে কোনো উদ্যোগ নিতে পারছে না সরকার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনে করছে, আদালতে বিচারাধীন বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করা প্রয়োজন। তাছাড়া, শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে বিএনপি ও সরকারবিরোধীরা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে উঠেছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সুযোগসন্ধানীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হচ্ছে সরকারকে। সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন্নাহারের সঙ্গে বৈঠক করেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে। আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও শিক্ষার্থীদের দাবিকে পুরোপুরি অযৌক্তিক মনে করছে না সরকার। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করেছিল। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সেই পরিপত্র বহাল চাইছেন। এবং শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনে কমিশন গঠন করে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিও করেছেন। ওই মন্ত্রী জানান, কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের বিষয়ে সরকারের ভেতরেও আলোচনা আছে। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা, জাতিগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধীদের কোটা আংশিক থাকতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে আপাতত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত। পরে চাকরিতে কত শতাংশ কোটা রাখা যায়, তা নিয়ে আলাদা একটা কমিশন করারও চিন্তাভাবনা আছে সরকারের। তবে, শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে এই মূহূর্তে সরকারের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সুযোগসন্ধানীরা। সোমবারে পাঁচ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আলোচনায়ও উঠে এসেছে বিষয়টি। সরকারের একটি পক্ষ মনে করছে, কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাজনীতি ঢুকে পড়ছে। শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের এ আন্দোলনকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়েছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো। তারা এই আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় শিক্ষার্থীদের মিছিল ও অবস্থানের কারণে জনদুর্ভোগ হচ্ছে। একাধিক মন্ত্রী-এমপি বলছেন, ‘আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার পেছনে কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে এ আন্দোলন অযৌক্তিক।’ সরকারের পক্ষ থেকে তাদের দাবি, আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখা হোক। এ পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আদালতে আইনজীবী দিয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করার বা পক্ষভুক্ত হওয়ার পরামর্শ সরকারের। কারণ, সরকার কোটার বিষয়ে আদালতের মাধ্যমেই একটা সমাধান চাইছে। সে জন্য আদালতের প্রক্রিয়া দ্রুত করার কোনো সুযোগ থাকলে, সে উদ্যোগও সরকার নেবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। মূলত, প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের সরকারি পরিপত্র হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছেন একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে। হাইকোর্টের সেই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে সরকার। এখন আন্দোলনের কর্মসূচি থেকে সরে শিক্ষার্থীরা যেন আপিল বিভাগে শুনানিতে পক্ষভুক্ত হয় সে পরামর্শ আইনমন্ত্রীর। এদিকে মঙ্গলবার সড়ক অবরোধ বাদ দিয়ে গণসংযোগ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি চলমান ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘটের কর্মসূচি চলবে। বুধবার আবারও অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’- এর নেতারা। এ অবস্থায় সর্বাত্মক অবরোধ পালন শুরু হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে চলছে বিভিন্ন আলোচনা। মাসখানেক আগেও সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করা নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু পুলিশ তাদের শাহবাগে অবস্থান নেওয়ার সুযোগই দেয়নি। এমনকি আন্দোলনকারীদের ১২ জনকে গ্রেফতার করে মামলাও দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু কোটা আন্দোলনকারীদের ক্ষেত্রে পুলিশের নীরব ভূমিকাতেও প্রশ্ন উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, একটা বিচারাধীন বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছে। এজন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সদস্যদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। নাগরিক দুর্ভোগ হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করতে দেখা যায়নি। তবে সর্বাত্মক অবরোধে সামনে পাল্টে যেতে পারে পুলিশের ভূমিকা। এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনে পুলিশকে ধৈর্য ধরে পর্যবেক্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ যদি আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কোনও কার্যক্রম শুরু করে তবে পুলিশ অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেবে।