সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বাত্মক কর্মবিরতির তৃতীয় দিনে গতকাল বুধবারও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। বন্ধ ছিল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমও। ফলে গতকালও অচল ছিল বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। চলমান আন্দোলনকে ‘অযৌক্তিক’ বলায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে আন্দোলন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হতে পারে। প্রত্যয় স্কিম বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক এই কর্মবিরতি পালন করছেন বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্য দুটি দাবি হলো সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৫৫টি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন সাড়ে ১৬ হাজার, কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন ৩৪ হাজার ৩৮২ জন। সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে গতকাল স্থবির ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে। চলমান আন্দোলন নিয়ে মন্তব্যের কারণে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ’। তিন দফা দাবিতে গতকালও সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষাসহ দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্রশাসনিক ভবনের সামনে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অর্থমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করে তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী পরিষদ ও কারিগরি কর্মচারী সমিতি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। তবে এখনো সময় জানানো হয়নি। আন্দোলন চলমান থাকবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমার সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীরও কথা হয়েছে। তিনিও আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।’ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয় গত বছরের ১৭ আগস্ট। বর্তমানে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় পাঁচটি কর্মসূচি (স্কিম) রয়েছে। এগুলো হলো প্রগতি, সুরক্ষা, প্রবাস, সমতা ও প্রত্যয়। এগুলোর মধ্যে প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো।
