হিন্দু শিক্ষার্থীকে শিবির আখ্যা দিয়ে মারধর ও হত্যার হুমকি ছাত্রলীগের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে এক ছাত্রকে বেধড়ক মারধর করে হল ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। মারধরের পাশাপাশি সনাতন ওই শিক্ষার্থীকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে ‘হত্যার’ হুমকিও দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। তবে অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা।

 এদিকে হুমকির পর ক্যাম্পাস ছেড়েছেন ওই শিক্ষার্থী। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যতদিন পর্যন্ত তাকে নিরাপত্তা দিতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত তিনি ক্যাম্পাসে আসবেন না।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম সবুজ বিশ্বাস। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ওই হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হলেন ওই হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান ওরফে আতিক। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।

আতিক দাবি করেছেন ওই শিক্ষার্থী হল ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদের অনুসারী। নিয়াজ ও অনুসারীরা তার কক্ষ ভাঙচুরের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণীতভাবে এই অভিযোগ করেছেন।

গত বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে সবুজ ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হন। এ ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শারীরিক নির্যাতন এবং ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকির প্রেক্ষিতে বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উল্লেখ করেছেন, ‘গত ১৬ মে দিবাগত রাত আনুমানিক ২ টার দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান আতিকসহ ৮-১০ জন অনুসারী আমাকে কক্ষ থেকে বের করে হলের ছাদে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে এবং শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে নিজেকে সনাতনী দাবি করলে আরও বেশি মারধর করে। আমি প্রাণ রক্ষার্থে দৌঁড়ে হল ত্যাগ করি। এমতাবস্থায় নিজের নিরাপত্তা শঙ্কায় পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সবুজ বিশ্বাস বলেন, ‘তারা ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে আমাকে বেধড়ক মারধর করে হল থেকে বের করে দিয়েছেন। এতে পায়ের বিভিন্ন অংশে ফেটে গেছে। সেই সাথে শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছে। ঘটনা শুনে পরিবারের লোকজন ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য বলেছেন। এছাড়া বর্তমানে ক্যাম্পাসে অবস্থান করাটাও আমার জন্য নিরাপদ নয়। তাই আমি বাড়িতে চলে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যতদিন পর্যন্ত আমাকে নিরাপত্তা দিতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত আমি ক্যাম্পাসে আসবো না।’

হলের আবাসিক শিক্ষার্থী না হয়েও হলে অবস্থান করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার এক বড় ভাই আমাকে এই হলে তুলেছে। আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না।’ তবে কোন বড় ভাই হলে তুলেছে সে বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে সবুজ বিশ্বাসের রুমমেট মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘সেদিন রাত ২টার দিকে আতিক ভাইসহ বেশ কয়েকজন এসে সবুজকে রুম থেকে বের করে নিয়ে যায়। পরে মসজিদের ছাদে নিয়ে গিয়ে তাকে মারধর করে। এর আগে আতিক ভাইয়েরা আমাদের রুমে এসেছিল, সেদিন তাকে চিনতে না পেরে সবুজ তার সঙ্গে একটু খারাপভাবে কথা বলেছিল।’ সেই জেরে সবুজকে মারতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি তাকে চিনি না। মূলত নিয়াজের অপকর্ম লুকানো ও ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী হলের যে ঘটনা সেটি আমি জানার সাথে সাথে উভয়পক্ষের সাথে কথা বলি। লিখিত অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয়। সবুজ ওই হলের আবাসিক কোনো শিক্ষার্থী নয়। আবাসিকতা ছাড়া হলে থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না। উক্ত ঘটনা দুই পক্ষের সাথে কথা বলে তা সমাধান করে দেওয়া হয়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সবুজ অভিযোগপত্র দিয়েছে। হল প্রশাসন দু’পক্ষের সাথে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।