নারী সহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক, ফেঁসে গেলেন এসপি মোক্তার

নারী সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম ও অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ ওঠা বাগেরহাটের সাবেক পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেনকে শাস্তি দিয়েছে সরকার। আগামী দুই বছরের জন্য তাকে এসপি পদ থেকে ‘নিম্নপদে অবনমিতকরণ’ করা হয়েছে। তার অনৈতিক কার্যক্রম প্রমাণ হওয়ায় এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। মোক্তার হোসেন বর্তমানে কক্সবাজার পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন।

বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

এর আগে ২০২১ সালের ১৩ আগস্ট এসপি মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেন পরিদর্শক পদমর্যাদার একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা। এ ঘটনায় ২০২২ সালের ১১ এপ্রিল নারী পরিদর্শককে ধর্ষণের মামলা থেকে অব্যাহতি পান এসপি মোক্তার হোসেন। তিনি (মোক্তার) মামলার বাদীকে বিয়ে করায় আদালত তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। একইবছর এক প্রজ্ঞাপনে মোক্তার হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।

যা জানা গেল:

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কক্সবাজার পিবিআইতে কর্মরত মোক্তার হোসেন ২০১৬ সালের মে থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুদানের UNAMID (দারফুর) জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে lodividual Police Officer (IPO) হিসেবে কর্মরত থাকাকালে তার অধীনে কর্মরত ছিলেন একজন নারী পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র)। এসময় তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং একই ক্যাম্পে ভিন্ন ভিন্ন রুমে সহাবস্থান করতেন। পরবর্তীতে হোয়াটস্যাপের মাধ্যমে আপত্তিকর ছবিসহ বিভিন্ন ধরনের মেসেজ আদান-প্রদান, সুদান থেকে দেশে ছুটিতে এসে ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে একইসঙ্গে অবস্থান করায় ওই নারী পরিদর্শক মোক্তার হোসেনকে স্বামী হিসেবে স্বীকৃতি চান। পরে সেটা না পেয়ে তিনি উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করা এবং ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়, যা পুলিশের ভাবমুর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়।

মোক্তারকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ অধিদপ্তর ২০২২ সালে কার্যক্রম শুরু করে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবার আগে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়। সরেজমিনে তদন্তের পর গত বছরের আগস্টে তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দেন। এতে মোক্তার হোসেনকে ‘দুই বছরের জন্য নিন্মপদে অবনমিতকরণ’ গুরুদণ্ডে দণ্ডিত করতে সদয় সম্মতি দেওয়া হয়, যার পরিপেক্ষিতে এই পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুই বছরের জন্য নিন্মপদে অবনমিতকরণ’ গুরুদণ্ড প্রদান করা হলো।

মামলার এজাহারে যা ছিল:

 

২০২১ সালের ১৩ আগস্ট পিবিআইয়ের এসপি মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে ওই নারী পরিদর্শককে ধর্ষণের অভিযোগে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের আদালতে মামলা করেন। পরে আদালত ডিএমপির উত্তরা পূর্ব মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলাটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। উত্তরা পূর্ব মডেল থানার পরিদর্শক আলমগীর গাজী মামলাটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করেন।

মামলায় ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, মোক্তার হোসেন জাতিসংঘের শান্তি মিশনে পুলিশের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে ২০১৯ সালের মে মাসে সুদানে যান। আর বাদী আগে থেকে মিশনের সদস্য হিসেবে সেখানে কর্মরত ছিলেন। ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর বাদীকে ধর্ষণ করেন মোক্তার হোসেন। এই কথা কাউকে না বলার জন্য চাপ দেন। এরপর থেকে বিভিন্ন কৌশল করে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে সুদান ও দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার ধর্ষণ করেন মোক্তার হোসেন।

মামলায় ভুক্তভোগী নারী কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, তিনি দেশে ফিরে এসপি মোক্তারের বাসায় গিয়ে বিয়ের কাবিননামা করার তাগিদ দেন। কিন্তু এসপি মোক্তার তাতে অস্বীকৃতি জানান এবং তাকে মারধর করেন।