আমরা দেখেছি কেন্দ্রে একজন ভোটারও নেই: মঈন খান

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো চলমান উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিতে না যাওয়ায় গণতন্ত্রকামী জনগণকে স্যালুট জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান।

তিনি বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) আমি বলেছিলাম বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে বর্জন করেছে সেভাবে আজ যে উপজেলার ভুয়া নির্বাচনের নাটক অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেটাকে তারা বর্জন করবে। আপনারা আজ সারা সকাল সেটার প্রমাণ দেখেছেন। ভোট শুরু হওয়ার পর থেকে আমার নির্বাচনী এলাকার ছবি আমরা নিয়েছি। আমরা দেখেছি ভোটকেন্দ্রে একজন ভোটারও নেই। ৭ জানুয়ারির মতো আমি আবার বাংলাদেশের গণতন্ত্র সচেতন মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্যালুট দিচ্ছি।’

বুধবার (৮ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ’র চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘কর্মক্ষেত্রে প্রবাসীদের সুরক্ষা ও প্রবাসী পরিবারের নিরাপত্তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সরকার প্রবাসীদের নিরাপত্তা দিতে পারে না মন্তব্য করে মঈন খান বলেন, প্রবাসীরা গায়ের রক্ত পানি করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, আর সরকার সেই টাকা দিয়ে বাহাদুরি করছে। সরকার বুঝতে পারছে না প্রবাসীদের যদি আমরা কোনো নিরাপত্তা দিতে না পারি তাহলে এই সরকারের কোনো নিরাপত্তা থাকবে না এবং দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ ধসে পড়বে। যদি আপনারা (প্রবাসী) রেমিট্যান্স দেওয়া বন্ধ করে দেন তাহলে এই সরকার সাতদিনের মধ্যে পড়ে যাবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আসলে দরিদ্র মানুষের অর্থনীতির যে অধিকার সেটা বঞ্চিত করছে আজকের সরকার। আজ তারা (সরকার) বড় বড় কথা বলে। তারা নাকি গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। তারা যদি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিই হতো তাহলে এটা সম্ভব হতো না, বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্রকে বিসর্জন দিয়ে একনায়কতন্ত্র কায়েম করা।

তিনি আরও বলেন, আমরা এই দেশ সৃষ্টি করেছিলাম মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে। তাদের কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার থাকবে। কিন্তু আজ বাংলাদেশ যে অবস্থায় উপনীত হয়েছে সেখানে মানুষের কোনো অধিকারই অবশিষ্ট নেই। তাই আজ বলবো যারা বিদেশে থেকে কঠোর পরিশ্রম করে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে পাঠাচ্ছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, শুধুমাত্র ২০২৩ সালে রেকর্ড সংখ্যক প্রবাসীদের লাশ বাংলাদেশে এসেছে। কিন্তু আমাদের বেশিরভাগ মূলধারার গণমাধমে এসব খবর প্রকাশ পাচ্ছে না। হয়তো সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ হবে বলেই এসব নিউজ প্রচার হয় না। প্রবাসে কেউ মারা গেলে কোনো খরচ ছাড়া সেই লাশ দেশে আনার যে দাবি আপনারা তুলেছেন সেটা খুবই যৌক্তিক। আমরা এর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।

দেশে সরকারবিরোধীদের নিরাপত্তা নেই, আওয়ামী লীগ দখলদারত্ব করছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন বিরোধীদল করা সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এটা ব্যক্তিগত হোক বা দল হোক। সবাইকে মামলায় জর্জরিত করা হচ্ছে। তাহলে নিরাপত্তা কোথায়? আর আওয়ামী লীগের দখলদারত্বের আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে আজকের উপজেলা নির্বাচন। সব বিরোধীদল এই নির্বাচনকে বর্জন করেছে। এই সরকার বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন দেশে একটা একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছে।

ভারতের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরও তীব্র হবে মন্তব্য করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই। কিন্তু ভারত যদি আমাদের দেশের পুলিশ প্রধান কে হবে, সেনাপ্রধান কে হবে, প্রধান বিচারপতি কে হবে, আবার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে তাহলে তো এই দেশের জনগণ ভারতকে বন্ধু ভাবতে পারে না। ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে বলেই আজ বাংলাদেশের মানুষ ভারতীয় পণ্য বয়কট করেছে। ভারতে আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মিটিং মিছিল সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ভারত যদি তাদের চরিত্রের বদল না করে তাহলে এটা আরও তীব্র হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, প্রবাসী ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক মো. নাসির উদ্দীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান খান, বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের সভাপতি কবির হোসেন, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর রশিদ মামুন, ছাত্রঅধিকার পরিষদের বিন ইয়ামীন মোল্লা প্রমুখ।