আগামী বাজেট হবে বেসরকারি খাতের জন্য উৎসাহবান্ধব : অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ বলেছেন, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট হবে বেসরকারি খাতের জন্য উৎসাহবান্ধব। আমরা বেসরকারি খাতের সাথে আলোচনার মাধ্যমে তাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি।

আজ রোববার (১০ মার্চ) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বেসরকারি খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব হবে। আমাদের সরকার বেসরকারি খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই বেসরকারি খাত আত বেশি বৃদ্ধি পাক, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও বেশি ভূমিকা রাখুক। আমরা আশা করছি সরকারি ও বেসরকারি খাত একসাথে কাজ করে বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

আবুল হাসান মাহমুদ বলেন, আমাদের সরকারের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও টেকসই স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। এ লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতের অংশীদারত্ব অপরিহার্য। আমরা বিশ্বাস করি বেসরকারি খাতের উন্নয়নের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আয়কর, মূসক ও শুল্ক সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন ও সংস্কারের মাধ্যমে কর কাঠামোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, অটোমেশন, কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ, ঋণের সুদ হার যৌক্তিক করা, অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়ীদের জন্য নানা ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা।

তিনি বলেন, আমাদের এই পদক্ষেপগুলো আরও কীভাবে সুচারুভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশাকরি পদক্ষেপগুলো বেসরকারি খাতের উন্নয়নে সহায়ক হবে। আমরা চাই বেসরকারি খাত আরও বেশি বৃদ্ধি পাক এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও বেশি ভূমিকা পালন করুক।

আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, দেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদান ক্রমশ বাড়ছে। বেসরকরি খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে গেলেও কিছু কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। আমরা বাজেটে সে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করছি। এ লক্ষ্যে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এরই মধ্যে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ৫০ লাখ টাকার পরিবর্তে ১০ লাখ বা তার বেশি মূসক পরিশোধে ই-পেমেন্ট, ই-চালান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, পাইকারি পণ্য ও সেবা পর্যায়ে ইএফডিএমএসের মাধ্যমে মূসক জাল সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রাথমিক পর্যায়ে সাত হাজার এবং ক্রমান্বয়ে তিন লাখ ইএফডিএমএস মেশিন স্থাপনের লক্ষ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়ন, কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন, সহজ ও দ্রততম সময়ে সেবা প্রদান, কার্যকর অবকাঠামগত ও মানবসম্পদ উন্নয়নের কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য রাজস্ব বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দেশের আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আমদানির বিকল্প শিল্প প্রতিষ্ঠাসহ অন্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলোকে এ বছর বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। আমরা আশাকরি এই পদক্ষেপগুলো বেসরকারি খাতের প্রসারসহ আমাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আগামী জাতীয় বাজেট বেসরকারি খাতের জন্য একটি উৎসাহব্যঞ্জক বাজেট হবে। আমরা বেসরকারি খাতের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে তাদের সমস্যা সধানে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, বৈশিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী আমাদের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ এবং বাণিজ্য সহযোগী অন্য দেশগুলোতে সামনের দিনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকবে। এটা একটা ভালো সংবাদ আমাদের জন্য। বিশ্বব্যাপী এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও ২০২৪ সালে তা ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নামবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির গতিধারা তো একটা চলমান প্রক্রিয়া। এখন ভালো আছে। পূর্বাভাসটা ভালো আছে। আমাদের কাজে এটা সাহায্য করবে। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। যা বর্তমানে ৮২ দশমিক ৫ ডলারে নেমে এসেছে। কাজেই জ্বালানি তেলের মূল্য স্থিতিশীল থাকবে বলে যে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে, সেটা আমাদের কাজের জন্য সাহায্য করবে বলে আমরা আশা করছি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা (সরকার) কাজ শুরু করেছি মাসখানেক হলো। আমরা বেশ বাধার সম্মুখীন হচ্ছিলাম। কিন্তু এরই মধ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক রয়েছে। যদিও ২০২৩ পর্যন্ত চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ১ দশমিক ৯৩ ডলার ঘাটতি রয়েছে।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত রেমিট্যান্স আয় হয়েছিল ১২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রয়েছে এবং সর্বশেষ ৬ মার্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।

তিনি আরও বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমাদের সরকারের সাফল্যসমূহ হলো- অভ্যান্তরীণ ও বহিঃখাতে নানা শক্তির অভিঘাত সত্ত্বেও ২০০৯-১০ থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত জিডিপির প্রবৃদ্ধির গড় হার ৬ দশমিক ৬০ শতাংশের ওপরে রাখা। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা। সরকারি বাজেটের আকার, রাজস্ব আয়, সরকারি ব্যয় ও বৈদেশি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দ্বিগুণ করা। বার্ষিক কর্মসূচির আকার বৃদ্ধি করা, মাথাপিছু আয় বাড়ানো এবং দারিদ্র্য বিমোচন।

ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম প্রমুখ।