বিশ্বজুড়ে মেডিকেল সেক্টরে বড় মাফিয়া চক্র কাজ করে : হাইকোর্ট

বিশ্বজুড়ে মেডিকেল সেক্টরে বড় মাফিয়া চক্র কাজ করে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, মাফিয়াদের বড় টার্গেট তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোই।

আজ রোববার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় রিটের শুনানিতে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালত এ মামলায় পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম।

আদালত এই মামলায় দেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে তথ্য ও আইন তুলে ধরার জন্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনিরকে ইন্টারভেনর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আইওয়াশ ও হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।ওই দিন আদালত বলেছিলেন, দায় এড়ানোর জন্যই তারা এ ধরনের রিপোর্ট দাখিল করেছে। আদালত বলেন, শিশু আয়ানের অ্যাজমা সমস্যা থাকার কথা জানার পরও কেন চিকিৎসকরা অপারেশনের জন্য এতো তাড়াহুড়া করলেন? শিশু আয়ানের সুন্নতে খৎনা করার সময় যে পরিমাণ ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে, হার্টের বাইপাসেও এতো ওষুধ  লাগে না। আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।

ওই দিন প্রতিবেদনটি আদালতে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম।

গত ২৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দাখিল করা প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়েছে, ৫ বছর ৮ মাস বয়সী আয়ানের ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা (হাঁপানি) ছিল। এই বয়সে অটো পিক বা এ্যালার্জিক অ্যাজমা হয়ে থাকে। ব্রঙ্কিায়াল অ্যাজমা এ্যালার্জেন (অতি সংবেদনশীলকারক) দিয়ে হয়।

অস্ত্রোপচারের আগে আয়ানকে এনেসথেসিয়া বা সংবেদনহীন করতে প্রয়োগ করা ইনজেকশন প্রোফোফল মারাত্মক এলার্জি প্রতিক্রিয়া (অ্যানাফিল্যাকটয়েড রিঅ্যাকশন) সৃষ্টি করতে পারে। যা শ্বাসতন্ত্র সংকোচিত হয়ে (ল্যারিঙ্গো স্পাজম) বা (ব্রঙ্কোস্পাজম ) শ্বাসনালীর আশপাশের পেশি শক্ত হয়ে খিঁচুনি হয়ে থাকতে পারে। যা এনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ম্যানেজ করেছেন।

চার নম্বর মতামতে বলা হয়েছে, সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) এবং ওষুধ দিয়ে (মেডিকেশন) দিয়ে আয়ানের হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনতে ১০ মিনিটের মত সময় লেগেছিল। যার কারণে হাইপক্সিক ব্রেইন ইনজুরি (মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ বন্ধ হয়ে মৃত্যু) হয়ে আয়ানের মৃত্যু হতে পারে। তখন সিটি স্ক্যান বা ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাম -ইসিজি করলে হাইপক্সিক ব্রেইন ইনজুরি হয়েছিল কি না তা জানা যেত। তাছাড়া সিপিআর কারণে (রিব ফ্রেকচার) পাঁজরের হাড়ও ভেঙে যেতে পারে বলে ধারণার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আয়ান চাইল্ডহুড অ্যাজমা সমস্যায় ভুগছিল। শ্বাসকষ্টের জন্য আয়ানকে মাঝে মাঝে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া লাগত। সুন্নতে খৎনার অপারেশনের আগে ওয়েটিং রুমে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি।

প্রতিবেদনের মতামত অংশে আরও বলা হয়, শিশু আয়ানের অপারেশনের সময় স্বাভাবিক রক্তপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে উপ-পরিচালক (আইন) ডা. পরিমল কুমার পাল ১৫ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন জমা দেন।

চার দফা সুপারিশ
সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মতো আর কারো যেন মৃত্যু না হয়, এজন্য চার দফা সুপারিশ করেছে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি।

১. হাসপাতালে একাধিক এ্যানেসথেসিওলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া।

২. রোগী ও রোগীর আত্মীয় স্বজনকে এ্যানেসথেসিয়া ও অপারেশনের ঝুঁকিসমূহ ভালভাবে অবহিত করা।

 

৩. হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থা রাখা।

 

৪. সরকারের অনুমোদনের পরে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা।