আজ খুলনা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, উদ্বোধন করবেন ২৪ প্রকল্প

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার (১৩ নভেম্বর) খুলনায় যাচ্ছেন। বিকেলে তিনি খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত খুলনা বিভাগীয় জনসভায় যোগ দেবেন। সেখানে ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি। পাঁচ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর এই মহাসমাবেশ ঘিরে খুলনা পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে। সমাবেশস্থল ও আশপাশে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দুপুর পনে ১টায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে নির্মিত হেলিপ্যাডে অবতরণ করবে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার। এরপর দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত সার্কিট হাউজে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন তিনি। বেলা পৌনে ৩টায় সার্কিট হাউজ মাঠে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এরপর যোগ দেবেন আওয়ামী লীগ আয়োজিত খুলনা বিভাগীয় জনসভায়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে আরও জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী ২ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ২২৩ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম খুলনা সফর এটি। তার আগমন ঘিরে গোটা খুলনা মহানগরীতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে নগরীতে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। তোরণ, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগরী। ইতোমধ্যে সার্কিট হাউজ মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে নৌকা ও পদ্মা সেতুর আদলে বিশালাকৃতির মঞ্চ। রাতে আলোকসজ্জা করা হচ্ছে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে।

 

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে সফল করতে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় শীর্ষ নেতারা খুবই সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। সার্কিট হাউসের মাঠের সভাস্থল ইতোমধ্যে কয়েকবার পরিদর্শ করা হয়েছে। রোববার (১২ নভেম্বর) দুপুরে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা শেষ বারের মতো সভাস্থলে নির্মিত মঞ্চসহ সার্বিক বিষয়টি পরিদর্শন করেন।

 

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রায় পাঁচ শতাধিক তোরণ স্থাপন করা হয়েছে

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রায় পাঁচ শতাধিক তোরণ স্থাপন করা হয়েছে

 

তারা সাংবাদিকদের জানান, সার্কিট হাউসের জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে চান তারা। এজন্য বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে জনসভায় ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করার টার্গেট রয়েছে তাদের। খুলনার ৯টি উপজেলার পাশাপাশি বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও গোপালগঞ্জসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, ট্রেন ও ট্রলারে করে দলীয় কর্মী সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও ছুবে আসবেন। ইতোমধ্যে এসব স্থানে প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দূরের কর্মী সমর্থকরা বাস থেকে শহর সংলগ্ন সুবিধাজনক স্থানে নামার পর মিছিল সহকারে সভাস্থলে যোগ দেবেন।

খুলনার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী নতুন নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। মাঠের ভেতরে বাইরে সরকারের উন্নয়ন প্রচারে সরব থাকবেন মনোনয়নপ্রত্যাশী এসব নেতাদের অনুসারীরা। জনসভায় আসা মানুষের সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে মাঠে খাবার পানি ও ভ্রাম্যমান টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। জনসভাস্থলে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করবে। সার্কিট হাউজ মাঠ ও আশপাশে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। গোটা নগরী নিরাপত্তার চাদরের ঢেকে দেওয়া হয়েছে

তিনি আরও জানান, জনসভাস্থলে আসা এবং জনসভা শেষে যাতে লোকজন নির্বিঘ্নে ফিরে যেতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। নৌপথে নৌ-পুলিশ টহল দেবে। জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে পুলিশ আনা হয়েছে।

 

নির্মাণ করা হয়েছে নৌকা ও পদ্মা সেতুর আদলে বিশালাকৃতির মঞ্চ

নির্মাণ করা হয়েছে নৌকা ও পদ্মা সেতুর আদলে বিশালাকৃতির মঞ্চ

১৮ দফা দাবি

খুলনায় পাটকল চালু, বিমানবন্দর প্রকল্পের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে দ্রুত কাজ শুরুসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১৮ দফা দাবি জানিয়েছে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি।

দাবিগুলো হচ্ছে, খুলনা বিমান বন্দর প্রকল্পের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে দ্রুত কাজ শুরু করা; খুলনা-মোংলা-ভাঙা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা; রূপসা-তেরখাদা ও দিঘলিয়াকে খুলনা শহরের সঙ্গে সংযোগের জন্য টানেল নির্মাণ; মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি; অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ড্রেজিং ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা; খুলনায় পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা; খুলনা-যশোর মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করা; খুলনায় অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন; স্বতন্ত্র ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন করতে হবে; আমদানি-রফতানির সুবিধার্থে মোংলা পোর্টের অদূরে কন্টেইনার স্টেশন স্থাপন; খুলনার পাটকলসহ বন্ধ সব মিল-কলকারখানা চালুর ব্যবস্থা; সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন হাব গড়ে তোলা; ভৈরব, রূপসা ও পশুর নদীর নাব্যতা বাড়াতে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা; খুলনায় পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন কেন্দ্র চালু; সরকারি উদ্যোগে খুলনায় বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং একটি চিড়িয়াখানা স্থাপন; খুলনা প্রেসক্লাবের বহুতল ভবন নির্মাণে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ; খুলনায় মেরিন একাডেমি ও ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা; খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা ও মহিলা আলিয়া মাদ্রাসাসহ আহসান উল্লাহ কলেজ; হাজী আব্দুল মালেক কলেজ; শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ; দৌলতপুর দিবা-নৈশ কলেজ সরকারিকরণ করা; খুলনা-যশোর-দর্শনা ডবল রেললাইন স্থাপন; খুলনা থেকে রেলযোগে ঢাকা যাওয়ার জন্য খুলনা-গোপালগঞ্জ রেললাইন স্থাপন; মুন্সিগঞ্জ-সাতক্ষীরা-যশোর রেললাইন স্থাপন এবং খুলনা-ঢাকা কালনা সেতু হয়ে সরাসরি রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা; শহররক্ষা বাঁধ ও রিভারভিউ পার্ক এবং খুলনায় নভো থিয়েটার দ্রুত বাস্তবায়ন ও ডায়াবেটিক হাসপাতালে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ।

খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দক্ষিণ অঞ্চলের উন্নয়নে এখন ধারাবাহিকভাবে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে, সেগুলো আগামীর খুলনাকে সমৃদ্ধ করবে। খুলনার ভৌগোলিক সম্ভাবনাকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে পারলে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে খুলনা দক্ষিণাঞ্চলের রাজধানী হিসেবে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পৌঁছানোর জন্য নেতৃত্ব দেবে। ফলে ভাগ্য পরিবর্তন হবে খুলনা উপকূলের প্রায় ৪ কোটি মানুষের।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে খুলনা অঞ্চলের অর্থনীতির উত্থানের অমিত সম্ভাবনা তৈরি এবং খুলনা আবারও শিল্পনগরীতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। অর্থাৎ এই একটি সেতুই হবে ভবিষ্যৎ খুলনার উন্নয়নের অন্যতম প্রধান ‘অনুঘটক’।