সেচ মৌসুমে এ-ই অঞ্চলে দেখা দিয়েছে ডিজেলের তীব্র সংকট। অক্টোবরের শেষ থেকে শুরু হয় জ্বালানি তেল ডিজেলের সংকট। তবে এখনো তা স্বাভাবিক হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ-এই দুই জেলায় কৃষি, বিদ্যুৎ, পরিবহন, শিল্পসহ অন্যান্য খাত জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল। নভেম্বরের শুরু থেকে ডিজেল তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ঠিক এই সময়ে শ্রীমঙ্গল পদ্মা মেঘনা যমুনা ডিপোগুলোতে দেখা দিয়েছে ডিজেল তেলের তীব্র সংকট। চাহিদা অনুযায়ী ডিজেল তেল না পাওয়া শিল্প, বানিজ্য কৃষি পরিবহন খাতে ভুর্তকি দিতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। পাম্প, এজেন্ট/ডিস্ট্রিবিউটর, প্যাক্ড পয়েন্ট ডিলাররা প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাহকদের কাছে জ্বালানি তেল পৌঁছানোর কাজে নিয়োজিত থাকে। ডিজেল তেলের সংকটের ফলে চাহিদা অনুযায়ী তা পৌঁছে দিতে পারছেন না এইসব প্রতিষ্ঠানগুলো। যারফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সংশ্লিষ্ট খাতে।
মূলত প্রধান স্থাপনা চট্টগ্রাম থেকে মিটারগেজ রেলপথে শ্রীমঙ্গল ডিপোতে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়।সেইসব জ্বালানি তেল ওয়াগনযোগে পরিবহনের দায়িত্বে থাকে রেলওয়ে চীফ অপারেটিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট (পূর্ব)।
জ্বালানি তেল ডিজেলের সংকটে ক্ষুব্ধ এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। ডিপো থেকে তেল উত্তলন করতে আসলে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার চৌধুরী পাম্পের ম্যানেজার আশরাফ মিয়া বলেন, সেচ মৌসুমে আমাদের এলাকায় পেট্রোল অকটেনর তুলনায় ডিজেলের চাহিদা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়। কারণ এই উপজেলা জুড়ে অসংখ্য শিল্প-কারখানা, কৃষি জমি, চা-বাগান, পরিবহন, বানিজ্যসহ রয়েছে অন্যান্য খাত। বিশেষ করে সেচ মৌসুমে ডিজেলের চাহিদা বেড়ে যায়। সেইসব খাতে ডিজেলের সংকটে গ্রাহকদের কাছে চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ করতে পারছিনা। কারণ ডিপোতে সেই পরিমাণে তেল মজুদ নেই। ফলে সেই কারণ দেখিয়ে অপারগতা প্রকাশ করছে শ্রীমঙ্গলের ডিপোগুলো। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষক ও অন্যান্য খাতের গ্রাহকদের কাছে ডিজেল পৌছানো সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতিদিন ৩০ হাজার লিটার ডিজেলের চাহিদার বিপরীতে ডিপোগুলো দিচ্ছে তার অর্ধেক।কৃষি, কলকারখানা ও পরিবহন খাতে আশুগঞ্জ ডিপো থেকে ডিজেল এনে কিছুটা চাহিদা মেটানো গেলেও বাড়তি মাশুল গুণতে হয়।
তাছাড়া এখন তেলের ব্যবসার মৌসুম চলছে। এই সময়ে ডিজেল তেলের সংকটে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট খাতে ব্যক্তিদের লোকসান গুণতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। জ্বালানি তেলের সংকট উত্তরণের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য তিনি বিপিসির চেয়ারম্যানের কাছে অনুরোধ জানান।
শ্রীমঙ্গলের রাহী এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মো. টিটু বলেন, প্রত্যেক বছরে এই মৌসুমে ডিজেলের চরম সংকট দেখা দেয়। ফলে লোকসানে পরে প্রতিষ্ঠান।ডিপো গুলো সপ্তাহে ৩ হাজার লিটারের বেশি ডিজেল তেল দিতে পারছেনা। প্রত্যেকদিন ডিজেলের চাহিদা রয়েছে ১ হাজার ৫শ লিটার আর সপ্তাহে প্রয়োজন হয় ১০ হাজার ৫শ লিটার। এমন অবস্থায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে চাহিদা অনুযায়ী ডিজেল কৃষকদের কাছে সরবরাহ করতে পারছিনা। তিনি বলেন, ডিপো কর্তৃপক্ষকের কাছে বৃহস্পতিবার ৫ হাজার লিটার ডিজেল তেল চাইতে গেলে সেই জায়গায় ২৫ শ লিটার তেল দেওয়া হয়। বাকী আড়াই হাজার লিটার ডিজেলের চাহিদা থেকেই যায়। এই সংকট চলতে থাকলে কৃষি, পরিবহন, বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে প্রভাবিত করবে বলে জানান এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। এই সংকট মাস পেরিয়ে গেলেও এর দায় কেউ নিতে চাচ্ছেনা।
শ্রীমঙ্গলের জ্বালানি তেলের দোকান মো. জাহের মিয়া ভান্ডারি বলেন, নভেম্বর থেকে ডিজেলের চরম সংকট দেখা দিয়েছে শ্রীমঙ্গলের তিন ডিপোতেই। প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষকদের মাঝে ডিজেল পৌঁছে দিতে পারছিনা। প্রতি বছর সেচ মৌসুমে ডিজেলের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। আশুগঞ্জ ডিপো থেকে ডিজেল এনে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।আশুগঞ্জ ও সিলেট থেকে ডিজেল পেলেও বাড়তি মাশুল গুণতে হয়। সেটি সেচ মৌসুম পর্যন্ত চলতে থাকলে তা এনে চাহিদা মেটানো সম্ভব হবেনা বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
ডিপোতে ডিজেল তেল সংকট হওয়ার কারণ জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ইনচার্জ রাশেদুল ইসলাম জানান, প্রত্যেক মাসে ১০-১২ টি র্যাক/ওয়াগন শ্রীমঙ্গল রেলহেড ডিপোতে পৌছানোর কথা। সেই জায়গায় নভেম্বর মাসে রেলওয়ে ওয়াগনযোগে ৭টি র্যাক এসে পৌছায়। ফলে ডিপোতে ডিজেল তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে তিনি জানান ডিজেলের সংকট থাকলেও পেট্রোল-অকটেন তেলের তেমন কোনো সংকট নেই।
যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মাসুদুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, যমুনা ডিপোতে ডিজেল তেলের সংকট নেই, এবং ডিজেলের সংকট শ্রীমঙ্গল ডিপোতে আছে কিনা সেই সম্পর্কে ওনার জানা নেই। যদিও সংকট হয়ে থাকে তাহলে পরিবহনের কারণে হতে পারে বলে জানান। তাছাড়া তিনি বলেন, স্থানীয় ডিলার/এজেন্ট মালিকরা কোনো অভিযোগ দেয়নি। শ্রীমঙ্গল ডিপোতে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিলে সিলেট থেকে ডিজেল আনার পরামর্শ দিয়ে ফোন রেখে দেন।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন মাষ্টার মো. সাখাওয়াত জানান, এল এম/চালক সংকট ফলে সেই কারণে র্যাক/ওয়াগন চালানো যাচ্ছেনা। তাছাড়া তিনি বলেন, প্রধান স্থাপনা চট্টগ্রামে তেল খালাসের পর ওয়াগনগুলো লোড করতে সময় নিচ্ছে বলে তিনি জানান।
ওয়াগন নির্ধারিত সময়ে চালানো হচ্ছে কিনা জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট রেলওয়ে (পূর্ব) কর্মকর্তা তিনি ফোন ধরেননি।