শেষ সময়ে ছোট গরুর বিক্রি বেশি, বড় নিয়ে দুশ্চিন্তা

রাত পোহালেই ঈদুল আজহা। এ ঈদকে সামনে রেখে এক সপ্তাহ আগে থেকেই রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলোতে বিভিন্ন আকারের গরু আনা হয়েছে। মাঝারি ও ছোট আকারের গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা কম বড় গরুর। ফলে, যেসব খামারি বা ব্যাপারি বড় বড় গরু নিয়ে হাটে এসেছেন, তারা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। তারা যে দাম হাঁকাচ্ছেন, তার চেয়ে অনেক কম দাম বলছেন ক্রেতারা। ফলে, বড় গরুর অধিকাংশই অবিক্রিত থেকে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। এতে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে তাদের।  (১৬ জুন) রাজধানীর ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল পশুর হাটে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঝারি ও ছোট গরুগুলোর অধিকাংশই বিক্রি হয়েছে। বড় আকারের গরু বিক্রি হচ্ছে কম।

পটুয়াখালী থেকে আসা মো. মহি উদ্দিন বলেন, ৩০টি গরু নিয়ে এসেছি। মাঝারি ও ছোট আকারের গরু ২০টি এবং বড় ১০টি। মাঝারি ও ছোট আকারের ২০টির দাম গড়ে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে। ইতোমধ্যে মাঝারি ও ছোট আকারের ১৯টি গরু বিক্রি করেছি। বড় আকারের তিনটি গরু ৪ লাখ টাকা করে বিক্রি করেছি। এখন ক্রেতারা বড় গরুর দাম বলছে না। সবাই মাঝারি ও ছোট আকারের গরু খুঁজছে।

কৃষ্টিয়া থেকে আসা নুরু ব্যাপারী বলেন, ১০টি বড় এবং ১৫টি মাঝারি আকারের গরু এনেছিলাম। মাঝারি গরুগুলোর সব বিক্রি হয়েছে। সাড়ে ৭ লাখ টাকা দামের বড় গরুর দাম বলছে ৫ লাখ টাকা।

কুষ্টিয়ার বোরহান আহমেদ ব্যাপারী বলেন, গতবার বড় সাইজের গরু এনে ২ লাখ টাকা লোকসান গুনেছি। এ বছর ১ থেকে দেড় লাখ টাকা দামের ৩০টি গরু এনেছি। একটি বাদে সবগুলো বিক্রি হয়েছে।

মাদারীপুরের গরুর ব্যাপারী কবির হোসেন বলেন, খুব টেনশনে আছি। অনেক বছর ধরে আমি গরুর ব্যবসা করি। এমন অবস্থা কখনো দেখিনি। আমার ১৬টি বড় গরুর মধ্যে ৩টি বিক্রি হয়েছে। কেনা দামেই ছাড়তে হয়েছে। বাকিগুলো আজকের মধ্যে বিক্রি না হলে বিপদে পড়ে যাব। এই গরু ফেরত নিয়ে যাওয়ার মতো ট্রাক ভাড়া আমার নেই।

ওয়ারীর বাসিন্দা আরিফ খান বলেন, গরু রাখার জায়গা নেই। সেজন্য শেষ সময়ে কিনতে এসেছি। সর্বোচ্চ ৯৫ হাজার টাকা আমার বাজেট। এখনো বিক্রেতারা দাম ধরে রাখছেন। এখন যারা হাটে আছেন, তাদের অধিকাংশই পাইকার। এই হাটে গরু না পেলে অন্য হাটে চলে যাব।

 

স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে গরু কিনতে আসা মনিরুল ইসলাম বলেন, ৯০-৯৫ হাজার টাকায় মোটামুটি ছোট দেখে গরু কিনব। যেটা পছন্দ হচ্ছে, সেটার দাম আবার বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষ ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী পশু কোরবানি করে থাকে। এ বছর ১০ শতাংশের কাছাকাছি মূল্যস্ফীতির যে চাপ, তারও একটা প্রভাব পড়তে পারে কোরবানির ক্ষেত্রে। তাই, ক্রেতারা ছোট ও মাঝারি গরু বেশি কিনছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, চলতি বছরে ১ কোটি ৭ লাখ ২৩৯৪টি পশুর চাহিদার বিপরীতে দেশে কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। চাহিদার তুলনায় ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৩টি কোরবানির পশু বেশি রয়েছে। এসব গরু আমাদের দেশেই লালন-পালন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে এবার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। তাই, ছোট গরু বেশি কিনছে। অন্যদিকে, গরুর উৎপাদন খরচে শুধু খাদ্যের দামই ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত বছর অনলাইনে লাইভওয়েট হিসেব করে ৪৮০-৫০০ টাকা কেজি দরে যেসব গরু বিক্রি হয়েছে, এবছর সেগুলোই আকারভেদে ৫০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করতে হয়েছে।

 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, উৎপাদন খরচ বেড়েছে, এটা সত্য। কিন্তু, কোরবানির পশুর সংকট নেই। বাজারগুলোতে প্রচুর দেশি গরু রয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০২৩ সালে পশু কোরবানি হয়েছে ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি। এর মধ্যে ৪৫ লাখ ৮১ হাজারটি ছিল শুধু গরু। এছাড়া, ১ লাখ ৭৮ হাজার মহিষ, ৪৮ লাখ ৪৯ হাজার ছাগল এবং কয়েক লাখ অন্যান্য পশু কোরবানি হয়। এসব পশুর বাজারমূল্য ছিল ৬৪ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালে ছিল ৪২ হাজার কোটি টাকা।