নোয়াখালী থেকে বন্যার পানি ঢুকে লক্ষ্মীপুরের বিস্তীর্ণ জনপদ ডুবে গেছে। এর সঙ্গে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে পুরো জেলায়। এতে সময় যত যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির ততই অবনতি হচ্ছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে। আবার অনেকের গন্তব্য উজানে স্বজনদের বাড়ি। এর মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের গন্তব্য অজানা। অনেকে আবার চকির ওপর রান্নাবান্না করে ঘরেই অবস্থান নিয়েছেন। কোমড় পানিতে যাতায়াতে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া সুপেয় পানিরও অভাব দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।
রোববার (২৫ আগস্ট) রাত পর্যন্ত কোথাও বন্যার পানি কমেনি। পুরো জেলায় বৃষ্টিও অব্যাহত ছিল। পানি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে আসা পানিতে নোয়াখালী ও ফেনীতে যখন বন্যা দেখা দেয় তখন লক্ষ্মীপুরে প্রবল বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। এ জলাবদ্ধতার কারণে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বহু মানুষ প্রায় ১ মাস জুড়ে পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন। সদর, রায়পুর, রামগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। সবশেষ গত শুক্রবার নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরে ঢুকে পড়ে। এতে লক্ষ্মীপুর এখন পুরোপুরি বন্যা কবলিত। এরমধ্যে শনিবার রাতেই প্রায় ৩ ফুট পানি বেড়েছে। রহমতখালী খাল হয়ে মেঘনা নদীতে যেন বানের পানি নেমে যেতে পারে সেজন্য মজুচৌধুরীর হাটের দুটি স্লুইসগেইট সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কোথাও যেন পানি কমছে না। উল্টো সময়ের সাথে সাথে বানের পানি বেড়ে চলেছে। একই সঙ্গে বৃষ্টিও হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের সর্বত্র। এতে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার ৫টি উপজেলায় ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৪২০ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৫৫ মেট্রিক টন জিআর চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা (জিআর ক্যাশ) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া পৃথক দুটি চিঠিতে চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেন। বরাদ্দকৃত চালের মধ্যে জেলার সদর উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন, রায়পুরে ২৫ মেট্রিক টন, রামগঞ্জে ৫০ মেট্রিক টন, রামগতিতে ২০ মেট্রিক টন ও কমলনগরে ৩০ মেট্রিক টন রয়েছে। বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে প্রত্যেক উপজেলার জন্য দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান বলেন, নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরে ঢুকে পড়েছে। এজন্য পানি বেড়ে গেছে। প্রায় সাড়ে ১২ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা তাদেরকে শুকনো খাবার বিতরণ করছি। একই সঙ্গে খিচুড়ি রান্না করেও আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষদেরকে পরিবেশন করা হচ্ছে।