নিজস্ব প্রতিবেদক,মৌলভীবাজার জেলা প্রেসক্লাবের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ৫ অক্টোবর এমন সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে গুটিকয়েক গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সেই সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সূত্রে জানা যায় ৫ অক্টোবর ২০২৪ ইং প্রেসক্লাবের মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। একদিন পর রোববার ৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ওই নির্বাচনে সভাপতি সরওয়ার আহমদ, সাধারণ সম্পাদক নুরুল শেফুল নির্বাচিত হয়েছেন।
এছাড়া আরো উল্লেখ করা হয়, প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি পদে মৌসুফ এ চৌধুরী ও শ ই সরকার জবলু। যুগ্ম সম্পাদক পদে হোসাইন আহমদ, সৈয়দ বয়তুল আলী, কোষাধ্যক্ষ পদে মামুনুর রশিদ মহসিন, দপ্তর সম্পাদক আবুল হায়দার মো. তরিক, প্রচার ও প্রকাশনা তুহিন জুবায়ের ও ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ওমর ফারুক নাঈমকে নির্বাচিত করা হয়।
এ ছাড়া কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন শাহ অলিদুর রহমান, জসিম উদ্দিন, আব্দুল আজিজ, মিন্টু দেশওয়ারা ও আশরাফ আলী। তবে ওই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে কারা ছিলেন তাও সংবাদে উল্লেখ করেননি।
এ নিয়ে মৌলভীবাজার জেলাসহ মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাথে সম্পৃক্ত অনেকে পক্ষে বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করছেন এবং তাদের মন্তব্য জানাচ্ছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সূত্রে দেখা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে গণহত্যাকারী স্বৈরাচারী সরকারের হাতে নিহত শহীদদের স্মরণে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের আয়োজনে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় শনিবার (৫ অক্টোবর) মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের হলরুমে ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৌলভীবাজার জেলা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক বকশি ইকবাল আহমদ ও সদস্য সচিব শেখ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও সদস্য মু. ইমাদ উদ দীনের যৌথ সঞ্চলনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণে আলোচনা-দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
৫ অক্টোবর উক্ত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল ছাড়া অন্য কোন অনুষ্ঠান কিংবা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। কিন্তু মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা ছড়ানো হচ্ছে যে ৫ অক্টোবর প্রেসক্লাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই বিষয়ে জেলা সদরের অনেক সংবাদকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে এ বিষয়ের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। সংবাদকর্মীরা আরো জানান আমরা ৫ই অক্টোবর মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণে আলোচনা-দোয়ায় উপস্থিত ছিলাম যেখানে বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি ডা. ছাদিক আহমদ, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বকশী মিছবাহউর রহমান, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীন, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক এস এম উমেদ আলী, সিনিয়র সাংবাদিক আজাদুর রহমান আজাদ, টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম (ইমজা) এর সভাপতি তমাল ফেরদৌস দুলাল, সাংবাদিক নজরুল ইসলাম মুহিব, মো. শাহজাহান মিয়া, আব্দুল ওয়াদূদ, আব্দুল কাইয়ুম, সাইফুল ইসলাম ও দুরুদ আহমদ, পৌর বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মমসাদ আহমদ, আব্দাল মাহবুব কোরেশী, প্রচার সম্পাদক মো. রেজাউল করিম রেজা, আহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মো. ইউছুফ আলী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আহত শিক্ষার্থী আরিফ আহমদ, জাকারিয়া হোসেন ইমন, আনন্দ পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে কারাবরণকারী ছাত্র মো. আব্দুস ছালাম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম জেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক এ্যাডভোকেট মো. নিয়ামুল হক প্রমুখ।
উল্লেখ্য, নানা অনিয়ম ও বৈষম্যের কারণে ২১ আগষ্ট মৌলভীবাজর প্রেসক্লাবে এক তলবি সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র সাংবাদিক বকসি ইকবাল আহমদ ।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সভায় দৈনিক বাংলারদিন পত্রিকার সম্পাদক বকসি ইকবাল আহমদকে আহ্বায়ক ও নিউজ টুয়েনটিফোর টেলিভিশন, মৌমাছি কন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক শেখ সিরাজুল ইসলাম সিরাজকে সদস্য সচিব ঘোষণা করে ৭ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সদস্য-এস এম উমেদ আলী (এনটিভি/দৈনিক ইনকিলাব), মোঃ আজাদুর রহমান (দৈনিক সংগ্রাম), নজরুল ইসলাম মুহিব (দৈনিক ইত্তেফাক/নিউনেশন), মোঃ মাহবুবুর রহমান রাহেল (দৈনিক আমার সংবাদ/মৌলভীবাজার টুয়েনটিফোর), মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ (দৈনিক যায়যায়দিন/জালালাবাদ)।
আরো উল্লেখ্য যে, দীর্ঘদিন ধরে মৌলভীবাজার জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক পান্না দত্তের স্পষ্ট মদদে অনেক সদস্য প্রেসক্লাবের উন্নয়ন ব্যাহত ও সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি, জায়গা দখল, নারী কেলেংকারী, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নারী সাংবাদিককে সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা সহ নানান অভিযোগের বিষয় উঠে আসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
এছাড়া অপপ্রচারকৃত মিথ্যা বানোয়াট কমিটির সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করা সরওয়ার আহমদ ও সহ সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করা শ.ই.সরকার জবলু সাম্প্রতিক স্বৈরাচার সরকার পতনে ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরোধিতা করে নানা ধরনের পোস্ট করেন। এছাড়াও একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামী।
বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের পোস্টে স্বৈরাচার শাসকের দালাল সহযোগী সহ নানা ধরনের বক্তব্য ও অভিযোগ উঠে আসে।
এছাড়া ৪ আগষ্ট ২০২৪ ইং তারিখে সদর উপজেলার চৌমুহনাসহ আশপাশের এলাকায় ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় সদর মডেল থানায় একাধিক মামলা হয়। এছাড়াও দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর পৃথক মামলায় সরওয়ার আহমদ ও শ.ই. সরকার জবলুকে আসামি করে মামলার বিষয় জানা গেছে ।
এছাড়া ৫ অক্টোবর মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে শহীদদের স্মরণে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলায়াত করেন সাংবাদিক মোক্তাদির হোসেন, জাগরণী ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন বাংলা টিভির মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি আলী হোসেন রাজন, পরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সকল শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা শেষে দোয়া পরিচালনা করেন জামেয়া দ্বীনিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মামদূদ আহমদ রাফিদ, জেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা হাসান আহমদ।
উল্লেখ্য যে, আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা আন্দোলনের সময় মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে ছাত্র জনতার মধ্যে আহতদের খোঁজখবর, চিকিৎসা সহয়তাসহ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার,আহত ও নিহত ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানান। পাশাপাশি দেশের ২য় স্বাধীনতা রক্ষায় ও স্বৈরাচারী সরকারের প্রেত্মাদের সকল অপচেষ্টা রুখতে দেশপ্রেমিক জনতাকে জাগ্রত থাকার আহবান জানান।
মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক বকসি ইকবাল আহমদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। উনাদের সাথে পূর্বে বহুবার বিষয়টি নিয়ে বসার চেষ্টা করেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। যার কারণে গঠন অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ শেষ ও দেশের চলমান পরিস্থিতিতে তলবি সভায় আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু এখনো তারা প্রেসক্লাবকে কুক্ষিগত করে রেখে দূর্নীতি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এছাড়া তারা আদালতে একটি অভিযোগ দাখিল করছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটা আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অবশ্যই জবাব দিব।
প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব শেখ সিরাজুল ইসলাম সিরাজের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সাবেক অনেকেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার উপর হামলা মামলার আসামী আর বাকিরা জামায়াত-বিএনপির তকমা লাগিয়ে ক্ষমতার লোভে লিপ্ত রয়েছেন। কেউ বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব ভবনে নির্বাচন করে কমিটি গঠন ও মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে জানার জন্য সরওয়ার আহমদ ও নুরুল ইসলাম শেফুলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে উনাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।