মহিলা লীগ নেত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁসে যুবদল নেতা শোকজ, যেসব কথা হয়েছিল তাদের

জামালপুরের বকশীগঞ্জ যুবদলের সদস্যসচিব ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবর আলম লাভলুর সঙ্গে যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জহুরা বেগমের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় যুবদল নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের নির্বাহী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। আজ বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকালে জামালপুর যুবদলের আহ্বায়ক সজীব খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শোকজে বলা হয়, আপনি বকশীগঞ্জ যুবদলের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকেও নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এমতাবস্থায় সংগঠনবিরোধী এমন কর্মকাণ্ডের জন্য আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা ২২ নভেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুল মনোয়ার মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়নের সামনে লিখিত কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হলো।

কারণ দর্শানোর নোটিশের বিষয়ে জানতে যুবদল নেতা মাহবুবর আলম লাভলুকে কল করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মহিলা লীগ নেত্রীর সঙ্গে যুবদল নেতার কথোপকথনটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

জহুরা: আসসালামু আলাইকুম ভাই।

লাভলু: ওয়া আলাইকুম সালাম। ভালো আছেন?

জহুরা: কই ভালো ভাই? শেষ পর্যন্ত থাকবার দিলেন কই।

লাভলু: আপনে গড়ে এলাকার গামা উকিলে এগুলো করছে।

জহুরা: হ। গামা আর ইয়ে মানিক ভাই (বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগর) বলে এগুলা জানেই।

লাভলু: মানিক ভাই আপনের বিষয়টা জানে না।

জহুরা: মামলার তালিকা বলে না দেখে দেয় না। থানায় দেওয়ার আগে বলে তালিকা দেইখা দে।

এখন আমাদের ভাইস চেয়ারম্যানি ফেরত দিবো? এখন এগুলোর মধ্যে মামলা দিয়া থুইলে কেমনে কী করি!
লাভলু: ঠিকই আছে। মামলার মধ্যে পইরা থাকলে আরেক ঝামেলা।

জহুরা: নাম কি চার্জশিট থেকে কাটা যাবো?

লাভলু: আপনে আমার সাথে যোগাযোগ কইরেন। চার্জশিট থেকে আমি নাম কেটে দিমুনি।

জহুরা: এখন কোনো কিছু করা যাবো না?

লাভলু: এখন মানিক ভাইয়ের সঙ্গে বসে কথা বলতে হবো।

জহুরা: আমি তো এখন মামলার ভয়ো বের হতে পারছি না। উপজেলা থেকে কাগজপত্র সব আইসা পরতাছে। কোর্টে যাইতে বলতাছে সমন্বয়কারীরা। সবাই রিট করবো। এলাকায় যদি না থাকতে পারি, জনগণের কাজি যদি না করতে পারি, শুধুমাত্র উপজেলার চেয়ারম্যান থাকবো না। আর যে মেম্বাররা পলাতক তারা থাকতে পারবো না।

লাভলু: আপনার বলে রাস্তার ঠিকাদারি কাজ চলতাছে। ওইডা আমাকে দিয়া দেন, আমি করি।

জহুরা: আমারতো নিজস্ব কোনো কাজ নাই। ওইটা আমার না। এইল্লা মানসে বাড়তি কথা কয়। মাইসে ফেসবুকে দিছে কোটি কোটি টাকা কামাইছি। এই করছি, সেই করছি। দয়া করে মানিক সওদাগরের সাথে বইসেন তো দেখি।

লাভলু: ঠিক আছে। আপনে আমি কালকে বসমু।

জহুরা: আমিতো আপনাদের সাথেই কাজ করতে চাই মিলেমিশে।

ফোনালাপের বিষয়ে জামালপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সজিব খান বলেন, ‘আমরা কল রেকর্ডটি শুনেছি এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তারা যা ভালো মনে করেছেন সেভাবে ব্যবস্থা নিয়েছেন। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে এমন কাজ করার কারো সুযোগ নেই।’

গত শনিবার (৯ নভেম্বর) যুবদল নেতা মাহবুবর আলম লাভলুর সঙ্গে যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জহুরা বেগমের কথোপকথনের ২ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে জনমনে। ফোনালাপে মামলার চার্জশিট থেকে নাম কেটে দিতে যুব মহিলা লীগ নেত্রীকে দেখা করতে বলেন লাভলু। সূত্র: কালের কণ্ঠ