হিন্দু ধর্মালম্বীদের বৃহৎ তীর্থ মহাষ্টমী স্নান উৎসব উপলক্ষে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে মোঘরাপাড়া পর্যন্ত চট্টগ্রামমুখী লেনে ১৭ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের যাত্রাকে ঘিরে লাখ লাখ মানুষের আগমনের কারণে এ যানজট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে যানজটের ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মস্থলে যাওয়া যাত্রীরা। বুধবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সরিজমিনে গিয়ে এমনই দৃশ্য দেখা যায়। জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুরসহ কয়েকটি পয়েন্টে পূণ্যার্থীরা যানবাহন থেকে নেমে রাস্তা পারাপারের কারণে এই যানজট সৃষ্টি হয়েছে। লাখ লাখ পূণ্যার্থীদের আগমনের কারণে মহাসড়কে আজ ভোর থেকেই যানবাহনের চাপ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তীব্র যানজটের কারণে অধিকাংশকেই পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। অনেকেই আবার তীব্র যানজটের কারণে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন জরুরি কাজে বের হওয়া নারী ও বৃদ্ধরা। এদিকে বিভিন্ন যানবাহন মালিকরা এ সুযোগে বেশি ভাড়া আদায় করলেও তাতেও যাত্রীদের কোনো লাভ হচ্ছে না। যানজট এতই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এক পয়েন্ট থেকে আরেক পয়েন্টে যেতে ঘণ্টাখানেক সময় লেগে যাচ্ছে। মো. ফাইজুল মাষ্টার নামের এক চাকরীজীবী জানান, কাঁচপুর যাওয়ার উদ্দেশে ঘণ্টা খানেক আগে শিমরাইল মোড় থেকে বাসে উঠলেও এখনো বাস একই স্থানে আছে। সাধারণ দিনগুলোতে কাঁচপুর যেতে সর্বোচ্চ ৬-৭ মিনিট লাগতো। আকলিমা নামে এক গার্মেন্টকর্মী জানান, দীর্ঘক্ষণ বাসে বসে আছি। কতক্ষণ রাস্তার এই অবস্থা থাকবে জানা নেই। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি পায়ে হেঁটেই গার্মেন্টসে যাবো। রফিকুল নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ব্যবসায়ের জরুরি কাজে রাস্তায় বের হয়েছিলাম। মহাসড়কে যে ভয়াবহ যানজট দেখছি তাতে করে আজ আর গন্তব্যস্থলে যাওয়া যাবে না। কাঁচপুর হাইওয়ে থানার টিআই (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, লাঙ্গলবন্দ স্নানকে ঘিরে পূণ্যার্থীদের আগমনকে ঘিরে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে এ দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে পুলিশের প্রায় ২০টি টিম মহাসড়কে কাজ করছেন। যানজটে আটকে থাকা আসলাম হোসেন বলেন, তার বাসা গজারিয়ায়। তিনি বাড়ি থেকে আসা-যাওয়া করে ঢাকাতে চাকরি করেন। প্রতিদিনই পৌনে সাতটার দিকে বাড়ি থেকে বের হন এবং যথাসময়ে অফিসে পৌঁছে যান। তবে আজকে মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণে ৮টা বাজলেও তিনি মেঘনা টোল প্লাজা পার হতে পারেননি। সেজন্য বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দের অষ্টমী স্নান শুরু হয় গত মঙ্গলবার। এদিন সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে লগ্ন শুরু হয়। এবারের অষ্টমী স্নান উৎসব দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ১০ লাখের বেশি পুণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হিন্দু শাস্ত্র মতে, দেবতা পরশুরাম হিমালয়ের মানস সরোবরে স্নান করে পাপমুক্ত হন। হিমালয়ের মানস সরবরের পানি ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। প্রতি বছর চৈত্র মাসে পূণ্য লাভের আশায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জড়ো হন নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদে। সেখানে স্নান করে নিজেদের পাপমোচন করেন। দেশের বাইরে থেকেও অনেকে আসেন এই অষ্টমী স্নানে।