ছোট বেলায় মা-বাবা হারান রফিকুল শেখ। এরপর থেকে চাচার কাছে বড় হওয়া তার। তাই চাচার পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে নিজের ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে ইউরোপের দেশ ইতালি যেতে দালালদের হাতে ২০ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিল তিনি। তবে তার ইতালি পৌছানো হয়নি। সেখানে পৌঁছানোর আগেই লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে স্বপ্নের সমাধি ঘটেছে রফিকুলের।
মারা যাওয়ারা হলেন- গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের চরপ্রসন্নদী গ্রামের ওহাব খন্দকারের ছেলে সাত্তার খন্দকার (৪০), একই গ্রামের মেহেদী শেখের ছেলে আরাফসান ইসলাম আশিক (১৮) ও মোল্লাদী গ্রামের আব্দুল মজিদ শেখের ছেলে রফিকুল শেখ (২৫)।
রফিকুলের চাচা মো. জয়নাল শেখ বলেন, “স্বপ্ন পূরণ করতে ইতালি যাওয়ার জন্য নিজের ভিটে-বাড়ি সব বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা দিয়েছিল দালালকে রফিকুল। সমুদ্র কেড়ে নিল তার প্রাণ। আমরা দ্রুত তার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।”
নিহত আশিকের বাবা মেহেদী শেখ বলেন, “ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য লোন করে ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে নিয়ে ১৭ লাখ টাকা পাশের শ্রীজিতপুর গ্রামের রকমান হাওলাদারের ছেলে বাবু হাওলাদারকে দেই। লিবিয়া যাওয়ার পর ছেলের সঙ্গে কয়েকবার কথা হয় আমাদের। পরে জানতে পারি লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে আমার ছেলে মারা গেছে। আমি দালাল বাবু হাওলাদারের শাস্তি চাই।”
ছাত্তার খন্দকারের স্ত্রী লাবনী খন্দকার বলেন, “লিবিয়া পৌঁছানোর পর আমার কাছ থেকে তিন দফা টাকা নিয়েছে দালালরা। ২৪ লাখ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও টাকা নিয়েছে ২৬ লাখ। আমি দ্রুত আমার স্বামীর মরদেহ ফেরত চাই। দালালদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনারও দাবি জানাচ্ছি।”
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানানো যাচ্ছে, লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী ব্রেগা তীরে বেশ কয়েকজন অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ দূতাবাস বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে। স্থানীয় উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষের মতে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়ার পর এসব মরদেহ ব্রেগা তীরে ভেসে এসেছে। উদ্ধারকৃত মরদেহগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক থাকার আশঙ্কার কথা বিভিন্ন সূত্রে জানা গেলেও, এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য দূতাবাস স্থানীয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রক্ষা করছে।