ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত মিরসরাই

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বৃষ্টি বন্ধ হলেও পানি না কমায় মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। গত ছয়দিন ধরে পাহাড়ি ঢল ও ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে ওঠায় নতুন করে কাটাছড়া, ইছাখালী, ওসমানপুর ও ধুম ইউনিয়নে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব এলাকারশতশত মানুষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় নিয়েছে। সর্বশেষ তিনদিনে করেরহাট, জোরারগঞ্জ ও হিঙ্গুলী ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে অতিবৃষ্টি ও ফেনী নদীর ফানির কারণে বন্যার সৃষ্টি হয়।

ইছাখালী এলাকার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার তারেক আজিজ জানান, বৃহস্পতিবার আমাদের এলাকায় বন্যার পানি বাড়ির উঠোন পর্যন্ত ছিল। শুক্রবার ভোর থেকে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এখন মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। আমরা স্বেচ্ছাসেবীরা মানুষের মাঝে শুকনো খাবার এবং রান্না করা খাবার দিয়েছি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্র শিবির আমাদের মাঝে এসব ত্রাণ সামগ্রী সহায়তা দিয়েছে।

জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, ধুম ও ইছাখালী ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা গত ছয়দিন পানি বন্দি রয়েছে। বেশিরভাগ বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে যায়। মানুষ আশ্রয় নেন পার্শ্ববর্তী আশ্রয় সেন্টারে। যারা বাড়ি ঘরে রয়ে যায় তারা পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বের হয়ে পড়েন।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে এসব এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় উদ্ধার কাজ বিঘ্ন ঘটছে। এখন নতুন করে জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন অংশ, ইছাখালী, কাটাছরা, মিঠানালা ও মঘাদিয়া ইউনিয়ন প্লাবিত হচ্ছে। দোতলা বাড়ি ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে শত শত মানুষ। যেসব এলাকায় পানির স্রোত বেশি, ঠাই নেই সেসব এলাকার মানুষ খাবার পানি ও চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

ইতিমধ্যে, পিএইচপি, বিএসআরএম, ক্লিফটন গ্রুপ, নাহার এগ্রোসহ কয়েকটি বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এলাকার বিত্তবানরা এগিয়ে এসেছে উদ্ধার অভিযান, শুকনো খাবার ওষুধসহ মানবিক সহায়তা নিয়ে।

এছাড়া মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা নুরুল আমিন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী, মিরসরাই উপজেলা জামায়াতের আমির নুরুল কবির, জোরারগঞ্জ থানার আমীর নুরুল হুদা হামিদী সাংবাদিক নুরুল আলম সহ বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধার ও শুকনো খাবার বিতরণ করছেন বিভিন্ন এলাকায়।

মিরসরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশান্ত চক্রবর্তী শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে জানান, বৃহস্পতিবারের তুলনায় পানির তীব্রত বেড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ সেবা বিচ্ছিন্ন, এখানে মোবাইল নেটওয়ার্কও নেই। এতে উদ্ধারের থেকে নিশ্চিত সংবাদ পাওয়া দূরহ হয়ে পড়েছে। সেনাবাহিনী ও রেডক্রিসেন্টের কর্মীরা পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে কাজ করছে। এছাড়া অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী করেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার ও তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করছে।

মিরসরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন জানান, মিরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে করেরহাট ইউনিয়ন, হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ, ধুম, ওসমানপুর, ইছাখালী, কাটাছড়া ইউনিয়ন, দুর্গাপুর ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সেনাবাহিনীর সহায়তায় বন্যা কবলিতদের চিকিৎসার্থে জোরারগঞ্জ মহিলা কলেজ ও চৈতন্যের হাট জামেয়া রহমানিয়া মাদ্রাসায় দুটি ফিল্ড হাসপাতাল চালু করা হয়েছে।

দুর্যোগকালীন সহায়তা হিসেবে সরকারিভাবে ১০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মিরসরাইয়ে ১২টি ইউনিয়নের ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮২টি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ২০ হাজার বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের জন্য রান্না এবং শুকনো খাবার সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।