বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামকে নিয়ে বেশকিছু ‘অপপ্রচার’ চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর পাল্টা জবাব হিসেবে ‘উই আর নাহিদ’ (আমরাই নাহিদ) হ্যাশট্যাগে ছেয়ে গেছে ফেসবুক।
জানা গেছে, সম্প্রতি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) মহাপরিচালক পদের নিয়োগপত্রে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম স্বাক্ষরিত সুপারিশের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে নাহিদ ইসলাম এ বিষয়টিকে অসত্য এবং বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করেছেন।
এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) চলমান হল আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘সব শালারা বাটপার, আর্মি হবে ঠিকাদার’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন।
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে সচিবালয়ের সামনে ছিলেন উপদেষ্টা নাহিদ। এ স্লোগান নাহিদকে উদ্দেশ্য করেই দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীসহ অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী ও শুভানুধ্যায়ীদের।
তবে জবি শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এ স্লোগান জবি শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই দিয়ে আসছিলেন। মূলত জবি প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে এ স্লোগান দেওয়া হয়েছে। নাহিদ ইসলামকে উদ্দেশ্য করে নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চান তাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন হোক। এ জন্যই ‘সব শালারা বাটপার, আর্মি হবে ঠিকাদার’ বলা হয়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আনুষ্ঠানিক জবাব দিয়েছেন জবির আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৩নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এবং পরে লিখিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ জবাব দেওয়া হয়।
জবি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, হল আন্দোলনের মুখপাত্র ও ১২তম ব্যাচের পদার্থ বিজ্ঞানের তৌসিব মাহমুদ সোহান এবং সংগঠক ও জবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী একেএম রাকিব উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো সাবেক স্বৈরাচার সরকারের প্রেতাত্মারা এ স্লোগানকে নিয়ে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে এবং সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনারা ঐক্যের ফাটল ধরাতে পারবেন না। আমরা দেশের স্বার্থে স্বৈরাচার, দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে এক ও অদ্বিতীয়।’
ঢাকার কেরাণীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের অসমাপ্ত কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়ে গত ৩ নভেম্বর শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে, সেনাবাহিনীর কাছে কাজ হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবিতে ৪ নভেম্বর থেকে আন্দোলনে নামছেন তারা।
৪ নভেম্বর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ অবরোধে আটকা পড়েন উপাচার্য রেজাউল করিম।
তখন উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “এটা এমন না যে, বললেই কাজ হয়ে যাবে। যা ১২ বছরে হয়নি, সেটা ১২ দিনে সম্ভব না। আমরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলছি, এটাও একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে।”
এই বক্তব্য দেওয়ার পর উপাচার্য গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে তাঁতীবাজার থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ডাকা হলে তারা তা প্রত্যাখান করে স্লোগান দিতে থাকেন।
পরদিন ৫ নভেম্বর দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নেমে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে দেন।
গত ৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ প্রদান ও অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি সুবিধা দেওয়ার জন্য অর্থ সংস্থান নিশ্চিত করতে হায়ার অ্যাডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে ইউজিসি। এ প্রস্তাবনার অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পাইলট প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) সকালে পাঁচ দফা দাবিতে গণপদযাত্রা নিয়ে শিক্ষা ভবনের সামনে এসে অবস্থান নেন জবি শিক্ষার্থীরা। বিকেলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম তিন কর্মদিবসের মধ্যে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্প সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার আশ্বাস দেন।
মঙ্গলবার দুপুরে উপচার্যসহ দুজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিয়ে পাঁচ দফা রোডম্যাপসহ আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ আশ্বাস পেয়ে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ক্যাম্পাসে ফেরেন শিক্ষার্থীরা।
এদিন শিক্ষার্থীরা পাঁচ দাবি আদায়ে অনঢ় অবস্থান নেন। দাবিগুলোর মধ্যে প্রথম দুটি হলো- স্বৈরাচারের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজ প্রকল্প পরিচালককে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং সাতদিনের মধ্যে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসার নিয়োগ করতে হবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা আসতে হবে- সেনাবাহিনীর হাতে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তর করা হয়েছে এবং হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট রূপরেখা দিতে হবে (অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হল)।
বাকি তিন দাবি হলো- অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পুরাতন ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার আমলে করা সব অনৈতিক চুক্তি বাতিল করতে হবে, সম্প্রতি ইউজিসির ঘোষণাকৃত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেট সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রেজাউল করিমসহ শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক রইছ উদ্দীন, প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক, আন্দোলনের মুখপাত্র তৌসিব মাহমুদ সোহান প্রমুখ।