চিরশায়িত হলেন মেধাবী আর সাহসী সেনা কর্মকর্তা তানজিম ছরোয়ার নির্জন। চোখের জলে তাকে শেষ বিদায় জানালেন উপস্থিত সবাই।
নিহত এ সেনা কর্মকর্তা স্বজনদের বলতেন তার ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা। ‘তোমরা আমার জন্য শুধু দোয়া কোরো।আমি আমার মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীর প্রধান হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করতে চাই।’
কিন্তু দুর্ভাগ্য, তার এই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। তার আগেই ডাকাতদের ছুরিকাঘাতে পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে। নির্জনের এই ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথাগুলো জানান তার মামা আশরাফ আলী খান শরিফ।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে টাঙ্গাইল জেলা সদর হেলিপ্যাডে নির্জনের লাশ নামে। এদিন ভোর সাড়ে ৬টায় সেনাবাহিনী থেকে ফোন করে পরিবারকে জানানো হয় নির্জন অসুস্থ, আপনারা চট্টগ্রাম আসেন। আমরা রওনা হয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পর্যন্ত গেলে তারা আবার ফোন করে নির্জনের মৃত্যুর খবরটি জানান।
নির্জন নিজেকে নিয়ে যেমন স্বপ্ন দেখতেন, তেমনি তার পরিবারের সব স্বপ্নই ছিল শুধু তাকে ঘিরে।এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে নির্জন ছিলেন ছোট, সবার আদরের। বাবা ছরোয়ার জাহান ব্যবসায়ী। মা নাজমা আক্তার স্কুলশিক্ষিকা। কয়েক বছর আগে বোন সূচির বিয়ে হয়েছে। ছোট্ট সাজানো-গোছানো সংসার।অথচ মুহূর্তেই এলোমেলো হয়ে গেলো সব কিছু।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় তরুণ সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট নির্জনের লাশ বহনকারী সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার জেলা সদর হেলিপ্যাডে এসে অবতরণ করে। সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নির্জনের লাশ গ্রহণ করেন। নিহতের পরিবারের কয়েকজন সদস্য এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
হেলিকপ্টার থেকে লাশ নামিয়ে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে তুলে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করের বেতকায় তার নিজ গ্রামে। বাড়িতে লাশ পৌঁছার পর সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা-মা। ভাইকে হারিয়ে পাগলপ্রায় একমাত্র বোন সূচি। যারা নির্জনকে এভাবে হত্যা করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন সবাই।
মঙ্গলবার বাদ আসর টাঙ্গাইলের বোয়ালী মাদরাসা মাঠে নামাজে জানাজা শেষে স্থানীয় গোরস্তানে তার লাশ দাফন করা হয়। সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুলসংখ্যক লোক জানাজায় অংশ নেয়।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলহাজারা ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতির খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় সেনাবাহিনীর একটি দল। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে লেফটেন্যান্ট তানজিম ছরোয়ার ডাকাতদলের কয়েকজনকে তাড়া করেন। এ সময় ডাকাতরা তানজিম ছরোয়ারের ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করলে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাৎক্ষণিক গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মেধাবী এই সেনা কর্মকর্তা টাঙ্গাইল শহরের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। পরে পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে ২০২২ সালের ৮ জুন আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন।