কথার আগে ছুরি চলে বগুড়ায়, চিত্র ভয়াবহ

অন্য জেলার চেয়ে বগুড়ায় ছুরিকাঘাতের ঘটনার চিত্র ভয়াবহভাবে বেড়েছে। গত দুই বছরে বগুড়ায় প্রতিমাসে গড়ে ১০টি করে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাগুলোর অধিকাংশই ঘটেছে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। কথার আগেই যেন ছুরি চলে এ জেলায়।

কেন বাড়ছে ছুরিকাঘাতের ঘটনা? কেন এর প্রতিকার হচ্ছে না? কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, আসামি পক্ষের ভয়ভীতি এবং স্থানীয়ভাবে মীমাংসার কারণে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ মামলায় যাচ্ছে না বা মামলার পরেও আপস-মীমাংসা করছে। ছুরিকাঘাতের ঘটনা রোধের একটি উপায় হিসেবে পুলিশও বাদী হয়ে আগ বাড়িয়ে মামলা করছে না। অন্যদিকে এই ঘটনাকেন্দ্রিক যে বিচারিক কার্যক্রম সেটিও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না সংশ্লিষ্টদের নিয়ম লঙ্ঘন এবং বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে। ফলে সামান্য কথা কাটাকাটির জেরেই ছুরিকাঘাত একটা মামুলি বিষয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। ছুরিকাঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও তার পরিবার, প্রশাসন, আইনজীবীদের সাথে বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী- ২০২৩ সালে ছুরির আঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছিলেন ১৫৩ জন। ২০২৪ সালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১১৫ জন। জেলা পুলিশ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী (যেগুলোর মামলা হয়েছে) ২০২৩ সালে ছুরিকাঘাতে আহতের সংখ্যা ৭৫টি আর নিহতের সংখ্যা ১৫টি। ২০২৪ সালে ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন জেলার ১০৪ জন এবং মারা গেছেন ২০ জন।

২০২৪ সালের নভেম্বরে বগুড়া সদর উপজেলার সাবগ্রাম ইউনিয়নের আকাশতারা এলাকায় ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে ইসতিয়াক রহমান (২১) নামের এক যুবককে ছুরিকাঘাত করেন সিজান (১৫) নামের এক কিশোর। বাম পাশের কিডনির নিচে দুটি স্ট্যাব করা হয়। ২০ দিনেরও বেশি সময় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ইসতিয়াক।

এ বিষয়ে ইসতিয়াকের বড় ভাই ইখতিয়ার বলেন, “ছুরিকাঘাতটি তার বাম পাশের কিডনির নিচে অনেক বেশি গভীরে চলে গিয়েছিল। এজন্য অপারেশন করতে হয় তাকে। এ বিষয়ে আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু আসামি পক্ষের লোকজন আমার বাবা-চাচাদের কাছে অনেক অনুনয় করার কারণে মামলা করা হয়নি। স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়েছে।”

গত বছরের নভেম্বরে মোবাইল চুরির ঘটনা কেন্দ্র করে বগুড়ার সোনাতলা পৌর শহরের কলাগাছী পাড়ায় বেলাল হোসেন নামের এক যুবক সায়েদ আলী নামের এক পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তির পিঠে ছুরিকাঘাত করেন।

ঘটনাটি জানিয়ে সায়েদ আলীর ছেলে শাজাহান আলী বলেন, “ঘটনার পর তারা আদালতে এ বিষয়ে মামলা করেছিলেন। তবে বেলাল আমাদের আত্মীয় হওয়ায় স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে নিয়েছি। পরবর্তীতে আদালত থেকে মামলা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।”

একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বগুড়া সদর উপজেলার ফাঁপোড় ইউনিয়নের কৈচর মধ্যপাড়া মাদ্রাসা মাঠে ফুটবল খেলা নিয়ে দ্বন্দ্বে আরাফাত ও রিয়াদ নামে দুই ভাইকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এদের মধ্যে আরাফাতকে বুকে আর রিয়াদ বুকে, পায়ে এবং নিতম্বে ছুরিকাঘাত করা হয়। রিয়াদ মারা যান ওই দিনই। আরাফাত দুই দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বাসায় ফেরেন। তারা ওই গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা আনন্দ নামে একজনকে ধরে সেনাবাহিনীর কাছে দেয়। পরে তাকে সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “রিয়াদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে।”

২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর রাতে শাজাহানপুর উপজেলার বেজোড়ায় বন্ধুদের সাথে পূজা মণ্ডপে ‍ঘুরতে গিয়ে ছুরিকাঘাতের শিকার হন তিনজন। এদের মধ্যে জুনায়েদ আলী (২০) নামের যুবককে বুকে, মিল্লাত হোসেন ও জামিরুল ইসলামের পায়ে স্ট্যাব করা হয়। বুকে ছুরির আঘাত করার কারণে জুনায়েদ মারা যান।

এ বিষয়ে কথা হয় ছুরিকাঘাতের শিকার মিল্লাত হোসেনের মায়ের সাথে। তিনি বলেন, “আমার ছেলে বন্ধুদের সাথে বেজোড়ায় বন্ধুদের সাথে পূজা মণ্ডপে ঘুরতে যায়। তারা অটোতে ছিল। রং সাইড দিয়ে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল যাওয়ার সময় অটো চালক মোটরসাইকেল চালককে উদ্দেশ্য করে বলেছিল ‘গাজা খেয়ে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে’। এই কথা শুনে তারা মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে অটো রিকশার সামনে এসে আমার ছেলেসহ আরো দুই জনকে ছুরিকাঘাত করে চলে যায়। একজন তো মারাই গেছে। আমার ছেলে তিনদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। আমার ছেলে এবং তার বন্ধুরা সবাই ছোট। যারা ছুরি মেরেছে তাদেরকে ওরা চিনত না। ওরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর শিকার করেছে তারা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল। ছেলেকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় আমরা কোন মামলা করিনি। তবে হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকার বাদী হয়ে মামলা করেছে।”

কাহালু উপজেলার নারহট্টগ্রামের সুলতান নামের এক যুবক তার বন্ধুর দ্বারা ছুরিকাঘাতের শিকার হন। তুচ্ছ ঘটনায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করানোর পর তিনি সুস্থ হন। তবে এ ঘটনায় তারা থানায় কোন মামলা দায়ের করেননি। এসব কথা জানান সুলতানের ভাই বায়েজীদ বোস্তামি।

একই বছরের অক্টোর মাসে বগুড়া সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের হরিগাড়ী গ্রামের শাহাদত হোসেন (২৫) নামের এক যুবককে গাছের সাথে বেধে বেধড়ক পেটানোর পর পায়ে ছুরিকাঘাত করা হয়।

ঘটনার বিস্তারিত জানাতে গিয়ে শাহাদতের বাবা শামসুল হক বলেন, “আমার ছেলে দর্জির কাজ করত। ঢাকায় কাজ শিখে গ্রামে ফিরে সেখানেই একটি টেইলার্স দিয়েছিল। নারী-পুরুষের পোশাক তৈরি করত। এই সূত্রে ওই গ্রামের পাপ্পু নামে এক ব্যক্তির মামাতো বোনের সাথে শাহাদতের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় তিন মাসের মত তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর মধ্যে একদিন রাতে পাপ্পুসহ আরো চার জন আমার ছেলের দোকানে গিয়ে তাকে সেখান থেকে বের করে একটি গাছের সাথে বেঁধে বেধড়ক পেটায়। মাথা ফাঁটিয়ে দেয়। পিঠ ফাঁটিয়ে দেয়। পায়েও একই অবস্থা করে। এরপর পায়ে কয়েকটি চাকু মেরে ফেলে রেখে যায়। পরে বিষয়টি জানতে পেরে ছেলেকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করাই। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলাও করেছিলাম। কিন্তু মামলার আসামি এবং থানার দারোগা তাকে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। আমি গরিব মানুষ, তাই বেশি কিছু করতে পারিনি।”

এসব বিষয়ে বগুড়া জজকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট দিলরুবা নুরী বলেন, “স্ট্যাবিংয়ের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আইন আছে। স্ট্যাবিংয়ে মামলা না হওয়ার ঘটনাও আছে প্রচুর। ভিকটিমরা মামলাতেই যায় না। অভিযোগটাই দায়ের হচ্ছে না। থানা অবধি যাচ্ছে না। তার আগেই ঘটনার সমঝোতা হচ্ছে। এর কারণ বিচারহীনতা, বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা, ভিকটিম বা তার পরিবারের হয়রানি, অর্থব্যয় সব মিলে বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সমাজ মননে নেতিবাচক প্রভাব থাকায় তারা মামলায় যাচ্ছে না।”

বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অ্যাডভোকেট নুরী বলেন, “এরকম ঘটনায় দেখা যায় টাকার বিনিময়ে অথবা ক্ষমতার প্র্যাকটিস করে বা ভয়ভীতি এলাকায় থাকতে হবে নিজেদের সুরক্ষা বিবেচনায় মামলা পর্যন্ত না গিয়ে টাকা পয়সা দিয়ে এটাকে মিনিমাইজ করা হচ্ছে। এরকম একটি অপরাধমূলক বিষয়েও যখন শেষ পর্যন্ত শাস্তি পর্যন্ত আসছে না। কোন অপরাধ করে টাকার বিনিময়ে পার পাওয়া গেলে অপরাধ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে যেগুলো অভিযোগ হিসেবে আসে- হয়তো থানায় অভিযোগ এলো, আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে কি দেবে না এর তদন্তভার যে পুলিশ কর্মকর্তার কাছে থাকে, সেই পুলিশ কর্মকর্তা হয়তো একদিকে আসামির কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসামিকে বলছে যে, তার নাম রাখবে না চার্জশিটে। বাদীকে বলছে নাম রাখবে। দুইপক্ষের কাছ থেকে টাকা খেয়ে খেয়ে দীর্ঘ সময় নেয় চার্জশিট দেওয়ার ক্ষেত্রে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাদী পক্ষ যদি প্রভাবশালী না হয় আসামিপক্ষ বিচার শুরু হওয়ার আগেই চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পেয়ে যায়। চার্জশিটে যখন নাম থাকে না, তখন তার আর বিচারই শুরু হয় না।”

তিনি আরো বলেন, “একটি ঘটনা যখন একটি এলাকায় ঘটছে, মানুষ দেখছে কে ঘটিয়েছে। এরপর যখন মানুষ দেখছে ওই ব্যক্তি খালাস পেয়ে যাচ্ছে, তখন ওই এলাকার মননে আসবে যে বিচার হয় না। তখন সমাজের মধ্যে কিন্তু এটা প্রমাণিত হয়ে যায় যে, বিচারহীনতা আছে। রাষ্ট্রীয়ভাবেও বিচার হয় না। তখন নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতাটা বেড়ে যায়।”

বগুড়া জজকোর্টের এই আইনজীবী আরো বলেন, “ছুরিকাঘাত একটি আমলযোগ্য অপরাধ। এই আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ নিজেই পদক্ষেপ নিতে পারে। নিজেই এফআইআর করে মামলা করতে পারে। তবে এটা একেবারে পুলিশের অবলিগেশনের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু যদি ভিকটিম ভয়ভীতির মধ্যে আছে কিংবা তার সুরক্ষা ইত্যাদি অনেক কিছু বিবেচনা করে তারা যদি চায় এই অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবে, তারা করতে পারে।”

বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম মইনুদ্দীন বলেন, “ছুরিকাঘাতের ঘটনায় কেউ মামলা করতে গেলে আঘাতের ধরন দেখে মামলার ধারা নির্ধারণ করা হয়। ঘটনার শিকার ব্যক্তির আঘাতের মাত্রা যেমন তার মামলার ধারাও তেমন। সাধারণত ছুরিকাঘাতের ঘটনায় ৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/ ৩০৭ ধারাগুলোয় মামলা অন্তর্ভুক্ত করা হয় এরকম ঘটনায়।”

ছুরিকাঘাতের ঘটনায় মামলার পর যেসব আসামি ধরা পড়ে তাদের ভবিষ্যত কী হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জামিনের ক্ষেত্রে এটি ম্যাজিস্ট্রেটের ইচ্ছে। অনেক সময় দ্রুত জামিন দেন আবার অনেক সময় দেন না। উকিলের উপরও নির্ভর করবে, কোন উকিল কেমন কথা বলবে।”

ছুরিকাঘাতের ঘটনায় দেখা যায়, মামলার পরিমাণ অনেক কম হয় এর কারণ কি? ভিকটিম যদি মামলা না করে সেক্ষেত্রে এ ধরণের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে মামলা করার কোন সুযোগ আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আইনগত কোন সুযোগ নেই। রাষ্ট্রীয় বিষয়ে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা নিতে পারে কোন ব্যক্তিগত বিষয়ে মামলা নিতে পারে না। যেমন কোন হত্যাকাণ্ড ঘটলো কিংবা লাশ পাওয়া গেলো অজ্ঞাত, আত্মীয় স্বজন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এমন বিষয় হলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করতে পারে। কিন্তু আহত কোন ব্যক্তি যদি তার আঘাতের বিচার না চায়, তবে তার পক্ষে বাদী হয়ে পুলিশের মামলা করার সুযোগ নেই।”

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান বলেন, “সময় লাগে ছুরিকাঘাতের মামলার বিচার করতে। আমরা মামলার পর ইনভেস্টিগেশন করে সত্যতা বের করে চার্জশিট দিয়ে দিচ্ছি। পরের কাজ কোর্টের। এরকম ঘটনায় মামলার পর শাস্তি প্রক্রিয়া পর্যন্ত পৌঁছাতে সর্বনিম্ন এক বছর লেগে যায়। এটা নরমাল ইস্যু। বিচার পর্যন্ত একটি মামলার মাসে একটির বেশি হাজিরা পড়ে না। তো একটি মামলার ক্ষেত্রে ১০টা, ১২টা, ১৪টা হাজিরা তো লাগেই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ভিকটিম বা তার পরিবার মামলা করতে চায় না।”

কেন করতে চায় না এরকম কোন অবজার্ভেশন আপনাদের আছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ নিয়ে আমাদের কোন গবেষণা নেই। তবে স্বাভাবিকভাবে অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি যে, দুই পক্ষ সমঝোতা করছে। তারা আর মামলা করতে আগ্রহী হয় না বা কেউ ভয় ভীতি পাচ্ছে এরকম কোন কারণে হয়তো হয় না।”

ছুরিকাঘাতের ঘটনায় তো পুলিশ চাইলেই বাদী হয়ে মামলা করতে পারে, পুলিশ এটা করছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ক্রিমিনাল মামলার মূল জিনিসটি হচ্ছে একটি পক্ষ নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত ভাবছে কিনা। সে যদি নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত না ভাবে যে তাকে ছুরি মেরেছে বা আঘাত করেছে এটি তার কোন ক্ষতি না এক্ষেত্রে সে না চাইলে সে মামলা নাও করতে পারে। তবে ভিকটিম বা ভিকটিমের পরিবার শনাক্ত থাকার পরেও তারা বাদী হয়ে মামলা করলো না, এক্ষেত্রে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করলো এরকম প্র্যাকটিস আপাতত নেই। কারণ, দুই পক্ষের মধ্যে তো এরকম ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকে, দুই পক্ষের মধ্যে যদি একপক্ষ মনে করে থাকে সে ক্ষতিগ্রস্ত না তাহলে পুলিশ এখানে আগ বাড়িয় মামলা করবে না। আগে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত মনে হতে হবে। আমরা সেই জায়গাগুলোতেই বাদী হচ্ছি যেখানে আসলে অপরাধী পাওয়া যাচ্ছে না এবং যে ব্যক্তি ভিকটিমাইজ হয়েছে সে জীবিতও না। ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ আমরা আবিষ্কার করতে পারছি না। তার মানে কি ওই ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত বিচার বিহীন যাবে এরকম ঘটনায় আমরা নিজেরা বাদী হয়ে নিই। যখন অজ্ঞাত ব্যক্তির কেউ থাকে তখন রাষ্ট্র তার পাশে দাঁড়ায়।”

স্ট্যাবিংরোধে আপনাদের করণীয় কি জানতে চাইলে তিনি তিনি বলেন, “অন্যান্য জেলার চেয়ে আমাদের জেলায় স্ট্যাবিং আসলেই বেশি হচ্ছে। এটির জন্য আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক কিছু প্রোগ্রাম করব। যদিও এটি অন্য ডিপার্টমেন্টের করার কথা। এটি তাদের সুযোগ আছে এবং তারা আইনগতভাবে বাধ্য। সেই ডিপার্টমেন্টগুলোকে নক করতে হবে এসব ক্ষেত্রে।”

বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আব্দুল বাসেদ বলেন, “স্ট্যাবিং বাংলাদেশের অন্যান্য যে কোন জায়গার চেয়ে বগুড়ায় তুলনামূলক বেশি ঘটছে। স্ট্যাবিংয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিরা খুব সহজে জামিন পাচ্ছে না। এসব আসামিদের জন্য সেপারেট কোন আইন নেই। অস্ত্র উদ্ধার হলে ১৮৭৮ সালের যে অস্ত্র আইন আছে, ওই আইনের যে ধারায় মামলা হচ্ছে। গ্রেপ্তারের পর অন্তত দুই মাসের নিচে কোন জামিন বিবেচনা করা হয় না। আবার কখনও কখনও চার মাসের আগে তাদের জামিন হচ্ছে না, বিশেষ করে যাদের কাছ থেকে চাকু উদ্ধার হচ্ছে। এছাড়া যথোপযুক্ত স্বাক্ষী প্রমাণ পেলে শাস্তিটা নিশ্চিত হচ্ছে। শাস্তির খাতা থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। স্বাক্ষী পেলে তো আদালত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। কিন্তু স্বাক্ষী না পেলে তো সেখানে আর কোন উপায় থাকে না।”

বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, “স্ট্যাবিং রোধে আমাদের পক্ষ থেকে স্থানীয় বাজারে যে বার্মিজ ছুরি, চাকু বিক্রি নিষিদ্ধ করেছি। এরপরেও যেখানে এরকম ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে সেখানে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোর তৎপরতা রাখা হয়। যেমন যেখানে জনসমাগম বেশি হয়, মেলায় কিংবা কোন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়। পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর পেট্রোল টিম সতর্ক অবস্থা থাকে। সে কারণে কিন্তু আগের চেয়ে এখন ছুরিকাঘাতের সংখ্যা কমেছে।”