আহতদের মধ্য থেকে উপদেষ্টা নিয়োগের দাবি

আহতদের মধ্য থেকে উপদেষ্টা নিয়োগের দাবি উঠেছে বলে শোনা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে একটি গ্রুপের কাফনের কাপড় পরে রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নেওয়ার গুঞ্জনও উঠেছে।

এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেন সাদিকুর রহমান খান নামে এক ব্যক্তি। চিকিৎসা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশকারী ওই আহতদের ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়ানো হয়েছে পোস্টটিতে।

সেই পোস্টটি আবার গতকাল শুক্রবার রাতে নিজ নিজ ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে শেয়ার করে একমত পোষণ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।

সারজিস যেখানে শুধু মূল পোস্টদাতার ক্রেডিট দিয়ে পুরো লেখাটি নিজ টাইমলাইনে হুবহু তুলে দিয়েছেন; হাসনাত সেখানে সাদিকুর রহমান খানের পোস্টটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘দুঃখজনক বাস্তবতা’।

পাঠকদের জন্য পোস্টের পুরো লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো:-

‘আহতদের এক গ্রুপের দাবি হলো, তাদের এখন উপদেষ্টা বানাতে হবে। আজ-কালের মধ্যেই একটা গ্রুপ কাফনের কাপড় পরে রাস্তায় নামার প্রিপারেশন নিচ্ছে।

তারা রাস্তায় শুয়ে পড়বে। উপদেষ্টা না করা পর্যন্ত উঠবে না। অন্যদিকে, সারা দেশে নিউজ করা হবে, আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের এতিমসহ বিভিন্ন পেজ থেকে অলরেডি ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে। আরো জোরেশোরে প্রচার করার প্রিপারেশন চলছে।’

‘মজার ব্যাপার হলো, তাদের মধ্যে অনেকেই ছাত্রলীগের লোকজন। ছাত্রদের হাতে মাইর খেয়ে আহত সেজে এখন আর হাসপাতাল ছাড়ছে না। বহু আহত নেতা সারাদিন প্রোগ্রাম করেন।

ব্যস্ত সময় পার করে এসে হাসপাতালে ঘুমান। ডাক্তাররা এক মাস আগেই ওদের ছুটি দিয়েছে। সুস্থ ঘোষণা করেছে। কিন্তু এরপরও ওরা কেউ ছুটি নেয়নি। হাসপাতালে থেকে আহত পলিটিক্স করছে।’

‘এদের এখন দাবি হলো, হাসপাতালভিত্তিক নেতা নিয়োগ দিতে হবে। চিন্তা করেন। হাসপাতাল কি রাজনীতি করার জায়গা? একজন আহত মানুষের নেতা হওয়ার শখ থাকে? আর যখন পুরো ব্যাপারটিকে আওয়ামী লীগের পালিয়ে থাকা অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা প্রমোট করছে, তখন এটাকে কি আর নির্দোষ বলার সুযোগ আছে?’

‘আমার ধারণা, পুরো রাজনীতির পেছনে দুটি কারণ আছে: এক. এদের সাথে ছাত্রলীগের শক্ত যোগাযোগ আছে। এরা এসব করাচ্ছে যাতে সাধারণ মানুষ মনে করে যে সরকার আহতদের চিকিৎসা করছে না। এতে পরেরবার কেউ যাতে রাস্তায় না নামে; দুই. সরকার আহতদের টাকা আর কার্ড দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এখানে নেতা হতে পারলেই বড় অঙ্কের একটা টাকা মারা যাবে। এমনকি লিস্টে নাম ঢোকানোর বিনিময়েও টাকা খাইতে পারবে।’

‘কথা হলো, এত সাহস এরা পাচ্ছে কই? কারণ, মানুষের সিমপ্যাথি। বেশির ভাগ অ্যাক্টিভিস্ট, টক শোর লোকজন সবাই এদের আহত বলে বলে মানুষের মধ্যে সিমপ্যাথি তৈরি করছে। এদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে বলছে। অথচ একজন আহত মানুষ কেন উপদেষ্টা হতে চাইবে বা একজন আহত মানুষ কিভাবে সারা দিন অনুষ্ঠান করে এসে রাতে হাসপাতালে ঘুমাবে, এই প্রশ্নটা কেউই করছে না।’

‘এই আবেগের ব্যবসায় সব লাভ ঘরে তুলছে লীগ। পেজে পেজে ছড়িয়েছে যে, আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছে না। আমার মনে হয়, সরকারের এবার কঠোর হওয়া উচিত। আনসারদের মতো, না হলে এরাও কবে নিজেদের মেরে ফেলে নিজেরাই ওটা প্রচার করে একটা বিরাট ঝামেলা তৈরি করতে পারে। মিডিয়াগুলো দয়া করে আবেগের আয়না রেখে সরেজমিনে যান, দেখে তারপর নিউজ করেন।’

‘আনসার লীগের পর এবার যে সরকার আহত লীগের খপ্পড়ে পড়েছে, এই ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের কথা আপনারা মানুষকে কেন জানাচ্ছেন না এখনো? আপনারা বারবার বলছেন, চিকিৎসা করেন, চিকিৎসা করেন, চিকিৎসা করেন। অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা করা যায়। বাট সুস্থ মানুষ যখন রাস্তায় শুয়ে উপদেষ্টা হওয়ার দাবি করে, সেটার চিকিৎসা কী হবে?’