রাবি শিক্ষার্থীসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের মামলা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে শাখা ছাত্রলীগ। রাজশাহীর মতিহার থানায় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাইয়ুম মিয়া বাদী হয়ে গত ১৭ জুলাই এই মামলা করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. মোবারক পারভেজ।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে হল কক্ষ ভাঙচুর ও বাইকে অগ্নিসংযোগের ঘটনা উল্লেখ করে ছাত্রলীগের এক নেতা বাদী হয়ে গত ১৭ জুলাই একটি মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, রাবির ১৫ জন শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কয়েকটি এলাকার ৫ ব্যক্তির নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। মামলায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রায় ৬৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা সমমূল্যের দ্রব্যাদি লুণ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, বিবাদীরা তাদের দলবলসহ দাঙ্গা-হাঙ্গামা করার উদ্দেশ্যে জনতাবদ্ধ হয়ে হাতে রামদা, লোহার রড, লোহার পাইপ, বাঁশের লাঠি, ক্রিকেট ব্যাট, হকিস্টিক নিয়ে গত ১৬ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রবেশ ফটকের তালা ভেঙে ছাত্রলীগের পুরনো ২৭টি বাইকে আগুন ধরিয়ে বিনষ্ট করে ফেলে। এই মোটর সাইকেলগুলোর আনুমানিক মূল্য ৬৪ লাখ টাকা। এছাড়া ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর, কয়েকটি ল্যাপটপ চুরি ও সনদপত্র পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ করা হয়।

মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন আম্মার, অর্থনীতি বিভাগের তোফায়েল আহমেদ তপু, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ফজলে রাব্বি, আরবি বিভাগের মাহাদী হাসান মাহির, পপুলেশন সায়েন্সেস অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের মাহাদী হাসান মারুফ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মেহেদী সজিব, দর্শন বিভাগের আশিকুর রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শাহ পরান, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যব্যবস্থা বিভাগের দেওয়ান বাধন, সিরামিকস অ্যান্ড ভাস্কর্য বিভাগের তানভীর আহম্মেদ রিদম, অর্থনীতি বিভাগের মমিনুল হক, লোকপ্রশাসন বিভাগের আব্দুল্লাহ আল মেহেদি, অর্থনীতি বিভাগের আল মুহি ফেরদৌস, রসায়ন বিভাগের শাহরিয়ার পলাশ, ফার্মেসি বিভাগের মো. আনারুল, নগরের মির্জাপুর এলাকার মো. নাইম ও হাসিবুল ইসলাম, বুধপাড়ার মো. হাবিবুর রহমান ও আশিকুর রহমান এবং কাজলার শাহরিয়ার আহমেদসহ অজ্ঞাত অনেকে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে এবং সারা দেশের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চার ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে অন্তত পাঁচটি আবাসিক হলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে অন্তত ১৫টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুরসহ তাদের কক্ষে অভিযান চালিয়ে পিস্তল, মদ ও রামদা উদ্ধার করেন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ওইদিন ক্যাম্পাস আন্দোলনকারীদের দখলে ছিল। ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা যায়নি।