ভর্তি পরীক্ষার মধ্যেই রাবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের হাতাহাতি

গতকাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। এ ভর্তি পরীক্ষার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার (০৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হল গেটে এ ঘটনা ঘটে।

হাতাহাতির সময় ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতা-কর্মীদের হাতে রড ও লাঠিসোঁটা দেখা গেছে। তবে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার দাবি, বিষয়টি দুই হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঝামেলা। তারা সেটি সমাধান করেছেন।

ছাত্রলীগ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারীদের মধ্যে এ হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় জড়িত সভাপতির অনুসারীরা হলেন, আল ফারাবী (মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা), তানভীর আহমেদ প্রমুখ। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা হলেন, সাজিদ (জিয়াউর রহমান হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা), মিশকাত হাসান (মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা) ও তাদের অনুসারীরা।

এদের মধ্যে আল ফারাবী ফাইন্যান্স বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, মিসকাত হাসান হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, তানভীর আহমেদ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এবং সাজিদ ফলিত রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রলীগের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সাজিদের এক ছোটভাই (জুনিয়র) তার বান্ধবীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের পুকুর পাড়ে বসেছিলেন। তাদের অপর পাশেই বসে ধূমপান করছিল মাদার বখ্শ হল ছাত্রলীগের কর্মী তানভীর আহমেদ ও তার এক বড়ভাই। ধূমপানের ধোঁয়ায় অস্বস্তি অনুভব করলে তাদেরকে ধূমপান করতে নিষেধ করেন সাজিদের সেই ছোটভাই। এর প্রতিক্রিয়ায় তাদের সাথে চোখ রাঙিয়ে কথা বলেন তানভীর। পরে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

পরবর্তীতে বান্ধবী নিয়ে বসা ওই শিক্ষার্থী ঘটনাস্থল ত্যাগ করে জিয়া হল ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সাজিদকে ফোন দেন। এরপর সাজিদ তার অনুসারীদের নিয়ে মাদার বখ্শ হলের দিকে আসেন। অপরদিকে তানভীর মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আল ফারাবীকে ডেকে নেন। উভয় পক্ষের নেতাকর্মীরা হল গেটে আসলে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। একপর্যায়ে ফারাবী ও তার অনুসারীরা হল থেকে রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হল গেটে এসে সাজিদ ও তার অনুসারীদের মারতে উদ্যত হয়। কিন্তু ঘটনাস্থলে উপস্থিত মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের আরেক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী মিশকাত হাসানসহ অন্যান্যরা তাদেরকে প্রতিহত করেন।

পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। এ সময় তিনি সবাইকে দুই মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। পরে জড়িতদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে আসেন তিনি। সেখানে শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা বিষয়টি মিমাংসা করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে সমাধান না করেই টুকিটাকি চত্বর ত্যাগ করেন সাধারণ সম্পাদক ও তার অনুসারীরা।

ঘটনার বিষয়ে মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আল ফারাবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটু ঝামেলা হয়েছিল। পরে সেটি ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলে সমাধান করে দিয়েছেন।’

দেশীয় অস্ত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো লাঠিসোটা নিয়ে আসিনি। তবে এমন হতে পারে অন্যরা কিছু নিয়ে এসেছিল, আর ঘটনাচক্রে হয়তো সেটা আমার হাতে দেখা গেছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়া হল ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সাজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, জিয়া হল ও মাদার বখ্শ হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছোট্ট একটি বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। সেখানে দুই হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মিলে সমাধান করে দিয়েছি।-দেশ রূপান্তর

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। এটা নিয়ে সেখানে হট্টগোল লেগেছিল। দুই হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সেটা ছাড়িয়ে দিয়েছিল। খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়ে এক মিনিটের মধ্যে সবাইকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বলি। পরে সেটি মিমাংসা করে দিয়েছি।’ তবে ঘটনাস্থলে দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘দুই হলের ‘নন-পলিটিক্যাল’ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছোট্ট একটি ঝামেলা হয়েছিল। পরবর্তিতে আমরা জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে মিমাংসা করে দিয়েছি।’ দেশিয় অস্ত্রের বিষয়ে তিনিও অবগত নন বলে জানান।

মাদার বখশ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শামীম হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। পরে তারা নিজেরাই বসে মিমাংসা করে নিয়েছে।’