ভবিষ্যতে যারা শিক্ষক পেশায় আসবে তাদের জন্য এই আন্দোলন

রায়হান রোহান: সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে এটি প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবিতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) শিক্ষক সমিতি। মঙ্গলবার (৪ জুন) সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত রাবিতে এবং দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রুয়েটে এই কর্মসূচি পালিত হয়। তাদের অন্য দুটি দাবি হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুপারগ্রেডে অন্তর্ভুক্তকরণ এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।

এ সময় শিক্ষকরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। যেটুকু ছিল, সেটুকু কেড়ে নেয়া হচ্ছে। আমলারা এই স্কিমের মধ্যে আসছে না, অথচ আমাদেরকে জোর করে এই স্কিমের মধ্যে নেয়া হচ্ছে। রান্নাকারীরা খিচুড়ি না খেয়ে আমাদের খাওয়াতে চাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতাকে আকর্ষণীয় করা না হলে মেধাবীরা এখানে আসবে না।

দাবি মেনে নেয়া না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে শিক্ষকরা বলেন, আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধ-দিবস কর্মবিরতি, ৩০ জুন পরীক্ষা বাদে সকল কার্যক্রম থেকে পূর্ণ কর্মবিরতিতে এবং ১ জুলাই থেকে সকল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হবে।

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক সম্প্রদায়ের উপর বুদ্ধিবৃত্তিক হামলা চালানো হয়। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি কি উন্নতি করতে পেরেছে? এটা যদি না পারে, তাহলে কেনো বারবার শিক্ষকদের ছোটো করার চেষ্টা করা হয়? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। যেটুকু ছিলো, সেটুকু কেড়ে নেয়া হচ্ছে। সর্বজনীন পেনশন চালুর প্রথম দিকে সরকার চারটি স্কিমের কথা বলেছিলো। সেটাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। কারণ সেটা বেসরকারি চাকরিজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য ভালো একটা বিষয় ছিলো।

তিনি আরো বলেন, কিন্তু প্রত্যয় স্কিম কেনো চালু করা হলো? আমলা বা সরকারি কর্মকর্তারা এই স্কিমের মধ্যে আসছে না। অথচ আমাদেরকে জোর করে এই স্কিমের মধ্যে নেয়া হচ্ছে। যারা এই খিচুড়ি বানাচ্ছে, তারা এটা খেতে চাচ্ছেন না, আমাদেরকে জোর করে খাওয়াতে চাচ্ছেন। এটাকে আমি দুরভিসন্ধিমূলক বলে মনে করি। এটার মাধ্যমে একটা পক্ষ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে। এটা সরকারকে গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত।

ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মামুনুর রশিদ বলেন, একের পর এক ভ্রান্ত নীতির মাধ্যমে দেশের শিক্ষা, গবেষণা ও শিক্ষকদের মানকে তলানিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবি এখনো মানা হয়নি। বরং আরো বৈষম্যমূলক নিয়ম চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। সব জায়গায় মেধাবীদের স্থান করে না দেয়ায় বর্তমানে আমাদের ব্রেইনড্রেইনের পরিমাণ বাড়ছে। বর্তমানে বিসিএস ছাড়া মেধাবীদের জন্য আকর্ষণীয় কোনো চাকরি নেই। ফলে তাদের অধিকাংশ বিদেশে চলে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতাকে আকর্ষণীয় করা নাহলে মেধাবীরা এখানে আসবে না।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি শাহেদ হাসান খান বলেন, শিক্ষকদের মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয়। কিন্তু সরকার যে বৈষম্যমূলক পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তা দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। আমরা আগে ২ঘন্টা কর্মবিরতি করেছি, আজ অর্ধ-দিবস কর্মবিরতি পালন করলাম। যদি আমাদের এই দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে আমরা ১ জুলাই থেকে সকল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষনা করবো।

রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, এ প্রত্যয় স্কিমে আমাদের কোনো সুবিধা থাকবে না। আমরা প্রতিমাসে যে টাকা জমা করবো, পেনশনের সময় সে টাকাই আমাদের ফেরত দেওয়া হবে। আজকে আমরা এজায়গায় দাড়িয়েছি নিজেদের জন্য না, বরং ভবিষ্যতে যারা এই পেশায় আসবে তাদের জন্য। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজ ও দেশকে রক্ষায় আজকের এই কর্মসূচী। যদি আমাদের এই দাবিগুলো মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে আমরা আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধ-দিবস কর্মবিরতিতে যাবো। এরপর ৩০ জুন আমরা পরীক্ষা বাদে সকল কার্যক্রম থেকে পূর্ণ কর্মবিরতিতে যাবো। ১ জুলাই থেকে আমরা সকল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষনা করবো। এটা ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে। রাবি ও রুয়েট শিক্ষক সমিতির এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।