দীর্ঘ চার বছর পর বশেমুরবিপ্রবিতে কেন্দ্রীয়ভাবে নবীন বরণ অনুষ্ঠিত

প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় নবীনবরণ  অনুষ্ঠান অন্যতম অনুভূতির একটি দিন। তবে দীর্ঘ চার বছর কেন্দ্রীয়ভাবে নবীনবরণ থেকে বঞ্চিত ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) নবাগত শিক্ষার্থীরা।
গোপালগঞ্জের  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ আজ সোমবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নবাগত শিক্ষার্থীদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর সভাপতিত্বে এবং প্রভাষক ময়নুল ইসলাম ও সহকারী অধ্যাপক সানজিদা হক মিশু সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, পিরোজপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম, সোমালিয়ার মোগাদিসুতে অবস্থিত দারুস সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আসিফ এস মিজান, অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান, গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক জনাব মুহম্মদ কামরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ডিন, সভাপতি, শিক্ষকবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, “আজকের নবীনদের ঘিরে বাবা-মা, প্রতিবেশি, আত্মীয়- স্বজন অনেকের অনেক স্বপ্ন, সর্বোপরি দেশের স্বপ্ন। এসব স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার একমাত্র পথ একজন সফল মানুষ হওয়া। এর অর্থ সিজিপিএ ৪ এ ৪ পাওয়া নয়। সেটা একটা ভিন্ন প্রেক্ষাপট। কারণ বাংলাদেশে এমন সফল মানুষ আছে যারা আদৌ পড়াশোনা করেনি। তাই সফলতা হচ্ছে একটি লক্ষ্যমাত্র এবং একটি শৃঙ্খল জীবনই পারে সফলতার শীর্ষে পৌঁছে দিতে। নবীনরা যাবতীয় নেতিবাচক ধারণা দূরে ঠেলে ভালোটুকু গ্রহণ করবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। তোমরা রাজনৈতিক দলের দাসত্ব স্বীকার করবা না। স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হবে। যেকোনো শিক্ষার্থী এই পাঁচটা বছর সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে আর ঘুরে তাকাতে হবে না। তাই তোমাদের সময়ের সর্বোচ্চ সঠিক ব্যবহার করতে হবে।”
অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর আরো বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অসংখ্য সমস্যায় নিমজ্জিত রয়েছে। তবে টানেলের শেষে আমি আলো দেখছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, প্রশাসনিক পুনর্গঠন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গবেষণাখাতে উন্নয়ন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্কোন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, ছাত্র সংগঠনগুলোকে আরো বেশি সক্রিয় করা এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজট মুক্ত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। “
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান বলেন, “নবীনদের ওপর সমাজ সভ্যতা নির্ভর করে। তাই আমাদের মানুষের মত মানুষ হতে হবে। কেননা কাগজের সনদে কখনো ভালো মানুষ হওয়া যায় না। আমাদের পাশবিক প্রবৃত্তি দূর করে ঐশ্বরিক প্রবৃত্তি নিয়ে জীবন গড়তে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, “আজকে যে শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করা হলো, ভবিষ্যতে তারাই ফুল হয়ে ফুটবে। তোমাদের এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে বড় হতে হবে। কারণ তোমরা দীর্ঘ ১২ বছর স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় এসেছো। আর এটি একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ যেখানে জ্ঞান সৃজন, সংরক্ষণ ও বিতরণ। সেখানে আমরা জ্ঞানের এমন পর্যায়ে আছি, যখন জ্ঞান সৃজন করতেও প্রযুক্তি লাগবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় তোমাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জ্ঞান সৃজনে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।”
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “নবীন শিক্ষার্থীরা আজ এমন একটি জগতে প্রবেশ করেছো, যেখান থেকে তোমাদের বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতি ঘটবে। তোমাদের যোগাযোগ হবে বিশ্বের সাথে। মনে রাখবে, এই ৫ বছর তোমরা যেভাবে কাটাবে, বাকি জীবনে তার প্রভাব থাকবে। তাই তোমাদের জন্য আমার পরামর্শ পড়, পড় আর পড়। তোমাদের সংযোগ থাকবে শিক্ষক, ক্লাস এবং লাইব্রেরি কেন্দ্রিক। শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাসের চেয়ে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা যেমন নেই, তেমনই শিক্ষকদের আলোচনা-পরামর্শেই অনেক প্রশ্নের দ্বার উন্মোচন হবে।
এ সময় জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণ ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে সোমালিয়ার দারুল সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আসিফ এস মিজান বলেন, “আধমরা একটা জাতিকে আপনারা শিক্ষার্থীরাই বাঁচিয়েছেন। সুতরাং ভবিষ্যতেও জাতি গঠনে আপনাদের লড়াই করতে হবে। কিন্তু বুকে যদি সাহস না থাকে, যদি ন্যায়ের পথের পথিক না হন, যদি নৈতিকতা বিবর্জিত জীবন যাপন করেন, আপনি অনেক জ্ঞানী হলেও তা কোনো কাজে আসবে না। সর্বোপরি সফলতার আধুনিক অস্ত্র হলো যোগাযোগ। তাই প্রত্যেকের চারপাশের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ থাকা জরুরি। দিনশেষে তোমাকে এমন কিছু করতে হবে, যা তোমাকে অন্যান্যদের থেকে আলাদা বলে প্রমাণ করবে। তবেই তুমি তোমার লক্ষ্যে পৌছাতে পারবে।”