ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষিকাকে ক্লাস-পরীক্ষা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দর্শন বিভাগের দুই শিক্ষিকাকে ক্লাস এবং পরীক্ষার কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শাহ কাওসার মোস্তফা আবুলওয়ালী এই নির্দেশনা প্রদান করেন। যারা এই সিদ্ধান্তের আওতায় এসেছেন তারা হলেন ড. রেবেকা সুলতানা এবং সহযোগী অধ্যাপক মন্দিরা চৌধুরী।

গতকাল মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ড. রেবেকা সুলতানা ও মন্দিরা চৌধুরী ১৩তম ব্যাচ থেকে ১৭তম ব্যাচ পর্যন্ত ক্লাস এবং পরীক্ষা সম্পর্কিত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবেন। এছাড়া, তারা কোর্স কোঅর্ডিনেটরের দায়িত্ব থেকেও বিরত থাকবেন। বুধবার থেকে দর্শন বিভাগের সব ক্লাস যথারীতি চালু থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

বিভাগীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ছাত্র আন্দোলনের সময় ড. রেবেকা সুলতানা ও মন্দিরা চৌধুরীকে নিয়ে বেশ কিছু বিতর্কের সৃষ্টি হয়। অভিযোগ রয়েছে, ড. রেবেকা সুলতানা আন্দোলন চলাকালীন ছাত্রদের হুমকি দিয়েছেন এবং তাদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। অন্যদিকে, সহযোগী অধ্যাপক মন্দিরা চৌধুরীর বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে কটূক্তি করা এবং ইসলামোফোবিক মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে।

দর্শন বিভাগের একজন শিক্ষার্থী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি তিনটা বিষয়ে কথা বলতে চাই। যে দুইজন বহিষ্কৃত হয়েছেন তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে স্বৈরাচারের হাতকে শক্তিশালী করেছেন, কিন্তু যে শাস্তি দেয়া হয়েছে তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কি তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে?  হয়নি। বরং আরাম আয়েশে বেতনা নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তাই আমি এটা শাস্তি না বলে আয়েশের ছুটি বলব।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, এই সাময়িক অব্যাহতির পূর্বে শাস্তিপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিলেন, তা উনারা জানতেন, তা স্বত্তেও উনারা পদত্যাগ করেননি। এখন অব্যাহতি পেয়েছেন, এই লজ্জাও কি তাদের তাড়িত করবে না পদত্যাগ করতে? বাংলাদেশের মানুষের পদ কিংবা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার প্রবণতা আছে? ফজলুল হক হলের খুনের কারণেও কাউকে নিজ থেকে পদত্যাগ করতে দেখি নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘তৃতীয়ত, দর্শন বিভাগের অন্তত পাঁচ জন শিক্ষক ৩ আগস্ট পর্যন্ত নীল দলের হয়ে  স্বৈরাচারীর শক্তি খুনী হাসিনার জন্য প্রকাশ্যে কাজ করেছে, অথচ আমরা মাত্র দুইজনকে অব্যাহতি দিতে দেখলাম, সেটাও আবার ত্রুটিপূর্ণ। স্বৈরাচারের দোসররা কিছুটা নীরব থেকে এখনও নিজ নিজ অবস্থান সারা দেশে ধরে রেখেছে বলে আন্দোলনের একজন সৈনিক হিসেবে  আমি হতাশ।’

দর্শন বিভাগের অন্য একজন শিক্ষার্থী বলেন, মন্দিরা চৌধুরী যে-সব শিক্ষার্থীদের দাঁড়ি-টুপি আছে তাদেরকে ‘হুজুর’ বলতেন, কণ্ঠ টান দিয়ে এটা বলতেন যেখান শ্লেষ-ঘৃণা মিশ্রিত থাকতো। আর রেবেকা সুলতানার কাছে যাদের টিউটোরিয়াল হতো তাদের সবাইকে নিয়ে তিনি প্রতিবার রামকৃষ্ণ মিশনে যেতেন এবং ছবি তুলে সবাইকে পোস্ট করতে বলতেন। বারবার রামকৃষ্ণ মিশনেই কেন যেতেন, ছবি প্রচার করতেন, তা আমার ধারণা নাই।

মন্দিরা চৌধুরী সম্পর্কে আরেকজন শিক্ষার্থীর মন্তব্য, ‘এই পর্যন্ত মন্দিরা ম্যামের কোর্স আমি কেন যত ভালো স্টুডেন্টই হোক না কেন নামে মাত্র পাশ নাম্বার দিতো। ভাইভা বোর্ডে আমার পরবর্তী এক বান্ধবীকে মন্দিরা ম্যাম নিকাব না খেলার কারণে ‘রোহিঙ্গা ‘ সম্বোধন করে মেয়েটাকে কাঁদিয়ে ছাড়ছে, তার দেওয়া অত্যাচারের কথা বিভাগের এমন কোন ছেলে মেয়ে নাই যে বলবে না। এমন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে কাম্য নয়।’

বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদের এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।